তারপরও হাকিমপুর ও নূরনগর রাজ্য দুটির মাঝখানে কোনো একটি সুবিধাজনক স্থানে তারা গড়ে তোলে হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাশনালয়, খেলাধুলার মাঠ ইত্যাদি ইত্যাদি। এই স্থানগুলোর আশপাশেই গড়ে ওঠে দুই রাজ্যের প্রধান নগরী।
কালের পরিক্রমায় পাল্টে গেলো আগের সেই সোনালি দিন। সবশেষ হাকিমপুর রাজ্য শাসন করতেন একজন রাজা আর নূরনগর রাজ্য শাসন করতো একজন রানি। রাজার ছিল একটিমাত্র কন্যা এবং রানির ছিল একটিমাত্র পুত্র। রাজার কন্যা ছিল খুব সুন্দরী আর রানির পুত্র ছিল খুব সুদর্শন। হাকিমপুর আর নূরনগর রাজ্যের রাজা-রানির মধ্যে শত্রুতা ছিল দীর্ঘদিনের। রাজা-রানির বৈরিতার কারণে দুই রাজ্যের লোকজনের মধ্যেও কোনো বনিবনা হতো না।
দুই রাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হলেও তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে নিয়মিত হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাশানালয়ে আসতে হতো। কারণ গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল রাজ্যের মাঝখানে। এসব নানান কারণে দুই রাজ্যের লোকজনের একে অপরের সঙ্গে সব সময় দেখা-সাক্ষাৎ হতো। তবে তারা কেউ কারো সঙ্গে প্রাণ খুলে কথাবার্তা বলতে ও মিশতে পারতো না। তাদের মধ্যে সব সময় রেষারেষি ভাব ছিল। তারা নিজ নিজ রাজ্যের রাজা ও রানিকে নিয়ে গর্ব করতো। কেউ কোনো সময় হারতে চাইতো না। নদীতে মাছ ধরা কেন্দ্র করে প্রায়ই জেলেদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধতো। এই সংঘর্ষ ভয়াবহ আকারও ধারণ করতো। ফলে প্রায়ই ওই নদীতে মাছধরা বন্ধ থাকতো।
হাটবাজারে জিনিসপত্র কেনাবেচা করার সময়ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হতো। তখন তারা রাজ্য দুটির মাঝের প্রধান হাটবাজার বর্জন করে নিজ নিজ রাজ্যের হাটবাজারে আলাদা আলাদাভাবে কেনাবেচা করতো। এতে অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এমনকি বছর শেষে পাঠশালায় ভর্তি নিয়েও সংঘর্ষ বাঁধতো। দুই রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা শ্রেণিকক্ষেও একে অপরের সঙ্গে কথা বলতো না। তখন পাঠদানে শিক্ষকদের সমস্যায় পড়তে হতো।
তেমনিভাবে খেলাধুলার মাঠেও ছিল একই রকম বৈষম্য। দুই রাজ্যের ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে খেলাধুলা করতে পারতো না। তারা মাঠটি ভাগাভাগি করে আলাদাভাবে খেলাধুলা করতো। এতে দিন দিন তাদের জীবন অতিষ্ট হয়ে গেলো। শাসকরা ভালো থাকলেও প্রজারা ছিল অসহায়। কিন্তু কেউই এই সমস্যার কোন সমাধান করতে পারলো না।
চলবে...
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৯
এএ