পিঁপড়ার পরিশ্রম সম্পর্কে এমনই বর্ণনা পাওয়া যায় নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের ‘কাজের লোক’ ছড়ায়। এ ছড়াটি আমরা প্রায় সবাই পড়েছি বা শুনেছি।
প্রায় প্রতিটি দেশে পিঁপড়া দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রজাতি আছে পিঁপড়ার। প্রজাতি ভেদে রঙের বৈচিত্র্যও আছে। পিঁপড়ার মধ্যে রয়েছে গভীর একতা ও মেলবন্ধন। পিঁপড়া নিয়ে বহুদেশে রূপকথার গল্পও প্রচলিত আছে। এরা মাটিতে কিংবা গাছের ডালে বাসা গড়ে থাকে। একটি বাসায় বহুসংখ্যক পিঁপড়া একত্রে বসবাস করে। এরা বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে বাসা নির্মাণ, খাদ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় নানা কাজ একসঙ্গে করে। খাদ্যশস্য তোলার মৌসুমে পিঁপড়ারা দিন-রাত খেটে খাদ্যদানা সংগ্রহ করে এবং যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করে, যা তাদের বছরব্যাপী কাজে লাগে।
প্রাণীটি ক্ষুদ্র হলেও এদের বুদ্ধিমত্তা খুবই চমৎকার ও বিস্ময়কর। এরা সব সময় দলবদ্ধ হয়ে থাকে। একে অন্যের বিপদ-আপদে এগিয়ে যায়। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশ বা আক্রমণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করে। একটি পিঁপড়া সহজেই পানিতে ডুবে যেতে পারে কিন্তু দলবদ্ধ হয়ে তারা অনায়াসে পানির ওপর ভেসে থাকতে পারে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের আবাসস্থল ভেসে গেলে খুব সহজে তারা দ্রুত একে অপরের সঙ্গে জালের মতো অবস্থান তৈরি করতে পারে। যাতে করে কেউই ডুবে মারা যায় না। এমনকি সবার নিচে যে পিঁপড়াটি থাকে তারও কোনো সমস্যা হয় না। কোনো একটি পিঁপড়া পানিতে ডুবে যাওয়ার পরেও তাদের হাত বাড়িয়ে দেয় এবং পানির নিচে তাদের অন্যরা থাকলে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভেসে ওঠে।
আমরা বাবুই পাখির বাসাকে শিল্পীর অনুপম নিদর্শন বলি। টুনটুনি পাখিরও। এগুলো প্রকাশ্যে দেখা যায় তাই এমন ভাবি। পিঁপড়ার বাসাও কিন্তু কম সুন্দর নয়। বাসার মধ্যের দৃশ্য কিন্তু চমৎকার। বনে-জঙ্গল বা মাঠে উঁচু উঁচু মাটির টিবি দেখা যায়। এগুলো হয় উঁই টিবি নয়তো পিঁপড়ার বাসা। এ বাসাগুলিকে আমরা পিঁপড়ার পাহাড় বলবো। মরুভূমিতেও এসব পাহাড় দেখা যায়। তবে ছোটপাহাড়ের মতো বড় বড় পিঁপড়ার বাসা/পাহাড় দেখা যায় অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। আমাদের দেশে ছোট আকৃতির পাহাড় দেখা যায়।
প্রাণিবৈচিত্র্যের ভারসাম্য ধরে রাখা ছাড়াও বেশ কিছু উপকারী দিক রয়েছে। শৃঙ্খলাবোধ আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। এদের ঘ্রাণশক্তিও প্রচণ্ড রকমের তীক্ষ্ণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৯
এএ