ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

নির্বাকদের বৈঠকে | মাহমুদুর রহমান

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৯
নির্বাকদের বৈঠকে | মাহমুদুর রহমান

শান্ত কিন্তু নামের মতো মোটেই শান্ত নয়। এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াবে, গাছ-পালার পাতা ছিঁড়বে, ডালপালা ভাঙবে, পশুপাখিদের ঢিল ছুড়বে। মাকেও অনেক বিরক্ত করে সে। এজন্য মায়ের কাছে বেশ বকুনিও খেতে হয়।

একদিন দুপুরে কোনো কারণে মায়ের বকুনি খেয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে শান্ত। জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে পায় গাছের ডালে একটি পাখি।

খুব ইচ্ছে হলো তাকে ঢিল ছোড়ার। কিন্তু সুযোগ না পেয়ে শুয়ে থাকলো।  

পাখিটির মিষ্টি ডাকে চোখ বুঁজে এলো। দারুণ একটা স্বপ্নের জগতে সে দেখলো ঢালুপথ বেয়ে নদীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ আশপাশ থেকে অনেকের কথা শুনতে পায়। তাকিয়ে দেখে কোনো মানুষ নেই। তবে কথা বলছে কে! শোনার জন্য একটা গাছের আড়ালে লুকালো। গোপনে তাকিয়ে দেখলো- অনেকগুলো গাছ একত্রে কথা বলছে। সবার মুখ আছে। ভয় ও উৎকণ্ঠা নিয়ে শান্ত তাদের কথা শুনছে।

বটগাছটা মাথা ঝাড়া দিয়ে বললো- কি ভাগ্য আমার! আমি তাদের ছায়া দিই। তারা ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে যাওয়ার সময় পাতা ছিঁড়ে ফেলে, চামড়াও ছিঁলে নেয়। বোঝে না আমার কষ্ট। আমগাছটা বললো- এ কষ্ট আমাদের সবাইকে সহ্য করতে হয়। কাঁঠাল গাছটা হালকা দুলে বললো- তোমাদের চেয়ে আমরা কাঁঠাল, সেগুন, শালদের বিপদ আরও বেশি। মানুষেরা আমাদেরই বেশি কেটে নিয়ে যায়। তারা কেন বোঝে না কোথাও কোনো গাছ না থাকলে পৃথিবী উতপ্ত হবে, পানি শুকিয়ে যাবে। নদী কলকল শব্দে বললো- তাহলে তো আমিও মারা যাবো। আমার কোলে যে সব মাছেরা খেলা করে তারাও মারা যাবে।  

তেঁতুল গাছ বললো- মানুষ যদি আমাদের মেরে ফেলে এমনটাই হবে। দমকা হাওয়া বেশ জোরে এসে দুপ করে থেমে গিয়ে বললো- তখন আমি আমার বিশুদ্ধতা হারাবো। মানুষ ও সব প্রাণী দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে।

শান্ত দেখছে তার পায়ের তলার মাটি কাঁপছে। সে ভয় পেয়ে গেলো। মাটি তখন বললো- সব গাছেরা মারা গেলে আমার বুক সূর্যের প্রখর তাপে ফেটে যাবে। মানুষ অনেক খারাপ। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে আমার চেহারা নষ্ট করে দিয়েছে। নদী বললো- ময়লা জমে জমে আমারও মৃত্যুদশা। তেঁতুলগাছ মনের দুঃখে বললো- দেখো আমার হাতে বীজগুলো যত্ন করে রেখে দিয়েছি। যদি কেউ এগুলো বপন করে, গাছে গাছে ভরে যাবে চারদিক।  

শান্ত আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে বললো- বীজগুলো আমাকে দাও। আমগাছ বললো- আরে তুমি তো আমাদের ক্ষতি করো। শান্ত বললো- আমি তোমাদের আর ক্ষতি করবো না। বীজগুলো আমাকে দাও, আমি বপন করবো। তেঁতুলগাছ বললো- তোমাকে বীজ দেবো না। তুমি নষ্ট করে ফেলবে।

শান্ত মন খারাপ করে চলে আসছে। রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে তার ঘুম ভেঙে যায়। বুঝতে পারে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছে। দৌড়ে গিয়ে তেঁতুল গাছের কয়েকটি বীজ নিয়ে এসে উঠানের পাশে মাটিতে পুঁতে দিল। সে ভাবলো- যখন গাছটা বড় হবে, পাখি বসবে, তেঁতুল খাবে আর গান করবে। গান শুনে ছুটে আসবে কাঠবিড়ালি, ছায়ায় ঘুমাবে কুকুর। কিছুদিন পর ছোট ছোট চারাগাছ দেখতে পেয়ে আনন্দের সীমা থাকে না।  
গাছগুলোতে পানি দিল, খুঁটি বেঁধে চারদিকে বেড়া দিল। তখন বৈশাখ মাস। প্রকৃতিতে মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে। একদিন শেষ বিকেলে খুব জোরে বাতাস বইতে শুরু করলো। সে ঘরের বাইরে ছুটে যাচ্ছে। মা বললো- এই ঝড়ের মধ্যে কোথায় যাচ্ছিস? শান্ত বললো- আমি যে গাছগুলো লাগিয়েছি সেগুলো অনেক ছোট। বাতাসে নেতিয়ে পড়তে পারে। মা বললো- তোর কী হয়েছে বাবা? আগে কত গাছপালা নষ্ট করতি। এখন এই ঝড় বাদলের মধ্যে গাছের এত যত্ন নেওয়ার কী দরকার? শান্ত বললো- মা আমি গাছদের কষ্ট বুঝতে পেরেছি। তারাই মানুষের প্রকৃত বন্ধু। তাই নিজের প্রাণের মতোই গাছদের ভালোবাসা উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।