দাদার বিড়াল বলে আমরা কেউ কিছু বলতে পারি না। আমাদের দাদার মতো বিড়ালটিও মুরুব্বি হয়ে গেছে।
এই বিড়ালটি এখন শিকার ধরে খায়। ঘরের হাড়ি পাতিল উল্টায়। চুরি করে দুধ, মাছ, মাংস খেয়ে ফেলে। ভীষণ চোর সে। প্রায়ই সে মুরগীর বাচ্চা, হাঁসের বাচ্চা ধরে ধরে খেয়ে ফেলে। তাকে চোখে চোখে রাখতে হয়। ওকে নিয়ে এখন সবার চিন্তা। দাদাভাইও এর ওপর খুব বিরক্ত।
আর কত সহ্য হয়। দিনে দিনে বিড়ালটি খুব খারাপ হয়ে গেছে। দাদাভাই বিরক্ত হয়ে একদিন বিড়ালটাকে চটের ব্যাগে ভরলেন। পরে দূরে একটা বনের ভেতরে ফেলে দিয়ে আসলেন।
দাদার বিড়ালটি একা একা বনের ভেতরে ঘুরে বেড়ায়। তার কোন সাথী নেই। তার কিছুই ভালো লাগে না বনে। ক্ষুধায় অস্থির। একদিন সে দেখে অনেকগুলো ইঁদুর দল বেধে মুখে খাবার নিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে তো বিড়ালটি মহা খুশি।
মনে মনে ভাবল, ‘এবার মনের আনন্দে পেট ভরে ইঁদুর খাওয়া যাবে। ’ কিন্তু ইঁদুরগুলো খুব চালাক। বিড়ালটাকে দেখেই তাড়াতাড়ি গর্তে লুকিয়ে পড়ল। বিড়ালটি সারাদিন গর্তের সামনে ওঁৎ পেতে বসে থাকল। কিন্তু কোনো
ইঁদুর আর দেখল না। তখন ক্ষুধায় বিড়ালের পেট চোঁ চোঁ করতে লাগল। বিড়াল মনে মনে ভাবল এভাবে আর বেশি দিন বেঁচে থাকা যাবে না। ইঁদুরের সাথে খাতির করতে হবে।
বিড়ালটি অনেক বুদ্ধি করে ইঁদুরের সাথে খাতির জমালো। বলল, আমি তোমাদের বন্ধু। তোমরা আমাকে আর ভয় করো না। আমি তোমাদের উপকার করতে চাই। তোমরা সারাদিন খাবারের খোঁজে বাইরে গিয়ে ঘোরাফেরা করো। আর আমি বাসায় বসে তোমাদের বাচ্চাগুলোকে পাহাড়া দিয়ে রাখি। এতে ইঁদুররা খুব খুশি হলো। এভাইে চলতে লাগল। ইঁদুরেরা সারাদিন বাইরে
গিয়ে খাবার কুড়িয়ে আনে আর বিড়ালটি বাসায় বসে বসে খায় আর পাহাড়া দেয়।
একদিন ইঁদুরগুলো বাইরে থেকে মুখে খাবার নিয়ে এলো। বাসার কাছে এসে দেখে বিড়ালটি খুব মজা করে চোখ বুঝে লেজ ফুলিয়ে কি যেন কটমট করে খাচ্ছে। ইঁদুরগুলো বাসায় ঢুকে দেখে সব শেষ। বাসার ভেতরে মাত্র দুটি ইঁদুর ছানা আছে। বিড়ালটি সব ইঁদুর ছানা খেয়ে ফেলেছে। তখন ইঁদুরগুলো পরামর্শ করে এক হয়ে গেল। সবাই মিলে বিড়ালকে বলল, তোমাকে
বিশ্বাস করে তোমার সাথে খাতির জমিয়েছিলান। আর তুমি আমাদের বাচ্চাগুলো খেয়ে ফেললে? এখন তো দেখছি আসলে তুমি আমাদের বড় শক্র। বিড়ালটি তখনও খাচ্ছে।
রাগে আর কষ্টে ইঁদুরগুলো একযোগে হামলা করল বিড়ালটাকে। শত শত ইঁদুর সারা শরীরে কাটুস-কুটুস কামড়ে বিড়ালটি কাবু হয়ে গেল। রক্ত ঝরতে লাগল। পরে ইঁদুরগুলো বিড়ালটাকে টেনে হেঁচড়ে বনের বাইরে নিয়ে রেখে আসলো। তারপর আর কোথাও দেখা যায়নি দাদার বিড়ালটি।