তোমরা নিশ্চয়ই ক্যাঙ্গারুর নাম শুনে থাকবে। অদ্ভুত প্রকৃতির এ প্রাণিটি শুধু অস্ট্রেলিয়া মহাদেশেই দেখতে পাওয়া যায়।
মা ক্যাঙ্গারুর থলিতে নবজাতক
তোমরা অভিযাত্রিক জেমস কুক ও জোসেফ ব্যাংকস এর নাম শুনেছো। ১৭৭০ সালের দিকে এ দু’জন পর্যটক অস্ট্রেলিয়ার কুকটাউন এলাকায় ভ্রমণ করছিলেন। হঠাৎ তারা অদ্ভুত একটি প্রাণী দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছে নাম জানতে চান। উত্তর এসেছিল ‘ক্যাঙ্গারু’। স্থানীয় লোকজন কুকদের ইংরেজি ভাষা বুঝতে না পেরে জবাব দিয়েছিল ‘ক্যাঙ্গারু’। স্থানীয় ভাষায় ‘ক্যাঙ্গারু’ শব্দের অর্থ ‘আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না’। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে যে, ক্যাঙ্গারু প্রাণীর আবিষ্কারের কাহিনীটিও মজাদার!
অস্ট্রেলিয়ায় রেড ক্যাঙ্গারু বা লাল ক্যাঙ্গারু সবচেয়ে বিখ্যাত। ক্যাঙ্গারু শুকনো পরিবেশ খুব পছন্দ করে। বৃষ্টি হয় না এরকম এলাকায় তারা থাকে। খোলামেলা জায়গা ও যেখানে ঘাস থাকে এমন জায়গায় বাস করতেও ভালোবাসে। ক্যাঙ্গারু মারসুপিয়াল গোত্রের এক প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের সামনের পা দুটো খুবই ছোট। তাই লাফাতে বাধ্য হয়! এরা ৪৫ ফুট পর্যন্ত লাফাতে পারে।
ক্যাঙ্গারুর প্রায় ৫০টি ভিন্ন প্রজাতি আছে। বড় ক্যাঙ্গারুগুলো ম্যাক্রোপোডিডে পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে আছে লাল ক্যাঙ্গারু, ধূসর ক্যাঙ্গারু, ওয়ালাবি, প্যাডিমেলন এবং কুওক্কা। অন্য পরিবারটির নাম ‘পোটোরইডে’। এই পরিবারে ইঁদুর-ক্যাঙ্গারু, বেটং এবং পোটোরু অন্তর্ভুক্ত। লাল ও ধূসর ক্যাঙ্গারু আকারে সবচেয়ে বড় হয়। এরা লম্বায় ২ মিটার দীর্ঘ এবং ৮৫ কেজি ওজনের হতে পারে। সবচেয়ে ছোট ক্যাঙ্গারু হলো ইঁদুর-ক্যাঙ্গারু। এরা লম্বায় লেজ বাদে এক ফুটের মতো হয়।
ক্যাঙ্গারু কেবল অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড, নিউ গিনি এবং আশপাশের দ্বীপগুলিতে, যেমন তাসমানিয়াতে পাওয়া যায়। অন্য কিছু দেশে ক্যাঙ্গারু নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেমন নিউজিল্যান্ডের টাম্মার এবং হাওয়াইতে ওয়ালাবির বসতি স্থাপন করানো হয়েছে। ক্যাঙ্গারুরা অস্ট্রেলিয়া ও নিউগিনির প্রায় সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়।
তোমাদের আর একটি তথ্য দিয়ে রাখি। ফসিলের নমুনা থেকে অনুমান করা হয় যে ক্যাঙ্গারুরা প্রায় ১৫ মিলিয়ন বছর আগে মায়োসিন যুগে অস্ট্রেলিয়াতে আসে। ৮ মিলিয়ন বছর আগে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে অস্ট্রেলিয়ার অতিবৃষ্টি অরণ্যগুলির জায়গায় উন্মুক্ত বনাঞ্চল ও সাভানা তৃণভূমির আবির্ভাব ঘটে। তখনকার ক্যাঙ্গারুরা প্রায় ৩ মিটার লম্বা ও প্রায় ২০০ কেজি ভারী ছিল। পরে বিবর্তন হয়ে হয়ে এখনকার রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
এএ