এক দেশে হঠাৎ আকাল দেখা দিলো। খাবার ও কাজের খুব অভাব হলো।
সেও দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চিন্তা করলো। কিন্তু সে মনে মনে ভাবল তার কিছু বুদ্ধি প্রয়োজন। সেই দেশে তালুকদার মিয়া নামে এক প্রবীণ লোক ছিলেন। গ্রামের সবাই তাকে তালুকদার কাকা বলে ডাকে। টাকার বিনিময়ে সে বুদ্ধি বিক্রি করে।
একদিন মোহাম্মদ আলী তার শেষ সম্বল একটি কম্বল বিক্রি করে দেয় ৩০০ টাকায়। এই ৩০০ টাকা দিয়ে সেই প্রবীণ লোকটির কাছে বুদ্ধি নিতে যায়।
আলী বলল, আমাকে ১০০ টাকার বিনিময়ে একটি বুদ্ধি দেন।
বুদ্ধি বিক্রেতা বললো, একলার চেয়ে দুকলা ভালো। এরপর আলী প্রবীণকে ১০০ টাকা দিল।
আলী বুদ্ধি বিক্রেতাকে বলল, আমাকে আরো একটি বুদ্ধি দিন। বুদ্ধি বিক্রেতা বললো, দশের কথায় মরণ ভালো।
বরাবরের মতো এবারও ১০০ টাকা পেলো বুদ্ধি বিক্রেতা।
যুবক লোকটি ভাবল তার দু’টি বুদ্ধি দিয়ে হবে না। আরো একটি বুদ্ধি লাগবে। সে বুদ্ধি বিক্রেতাকে বলল, আমাকে আরো একটি বুদ্ধি দিন।
বুদ্ধি বিক্রেতা তার ৩য় বুদ্ধিতে বললো, প্রয়োজনে নিশীতে জাগন ভালো। বুদ্ধি বিক্রেতা এবারও ১০০ টাকা পেলেন।
আলী ৩০০ টাকার বিনিময়ে ৩টি বুদ্ধি নিলো। এই তিনটি বুদ্ধি নিয়ে আলী অন্য দেশে রওনা হলো।
অন্য দেশে যাওয়ার জন্য মরুভূমি দিয়ে হাঁটতে লাগল আলী। হঠাৎ মরুভূমিতে একটি কচ্ছপ দেখতে পেলো সে। কচ্ছপটি দেখে বুদ্ধি বিক্রেতার ১ম বুদ্ধির কথা মনে পড়ল তার। সে কচ্ছপটিকে তার সঙ্গে নিয়ে নিলো। মনে মনে ভাবল সামনে পানি পেলে কচ্ছপটি ছেড়ে দেবে।
হাঁটতে হাঁটতে সামনে একটি বটগাছ দেখতে পেলো। সে বটগাছের নিচে বিশ্রাম নিতে বসে গেল আলী। সে বটগাছে একটি সাপ ও একটি কাঁক বাস করত। তারা দু’জন খুব ভালো বন্ধু ছিল। কাঁক ও সাপ দু’জন কথা বলতে থাকল। এক পর্যায়ে কাঁক সাপটিকে বললো, বন্ধু তুমি ওই লোকটিকে দংশন করবে। তারপর আমি ওই লোকটির চোখ খাব। কচ্ছপ কাপড়ের ভেতর থেকে কাঁক ও সাপের কথা শুনল। সাপ গাছ থেকে নেমে এসে যুবক লোকটাকে দংশন করল।
কচ্ছপটি কাপড়ের বেগটি কেটে যুবক লোকটিকে বাঁচাতে আসল। কাঁক যখন লোকটির চোখ খেতে আসল ওমনি কচ্ছপ তার পা কামড়ে ধরল।
কচ্ছপ সাপকে বললো, লোকটির শরীর থেকে তোমার বিষ শুষে নেও। না হলে তোমার বন্ধুকে ছাড়ব না। কাঁকটি সাপকে অনুরোধ করলো আমাকে ছাড়িয়ে নাও। সাপটি তার বন্ধুর অনুরোধে সাড়া দিয়ে বিষ শুষে নিলো। তারপর যুবক লোকটি আবার চলা শুরু করলো। সামনে নদী দেখতে পেয়ে লোকটি কচ্ছপটা ছেড়ে দিলো।
লোকটি নতুন দেশে চলে গেল। সে সেখানে একটি নদীর পাশে অনেক লোকের জমায়েত দেখতে পেলো। সে আরো দেখতে পেল লোকজন বলাবলি করছে, যে এই মৃত লোকটিকে কি করা যায়। তখন লোকজন আলীকে দেখে বলল, আপনি এই লোকটিকে যদি দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আসেন তাহলে আপনাকে ২০০ দিনার দেওয়া হবে।
আলী তাতে রাজি হলো। সে মৃত লোকটিকে নিয়ে নদীর পাড়ে গেল। নদীতে ফেলে দেওয়ার সময় হঠাৎ পয়সার শব্দ শুনতে পেলো। তিনি পয়সার থলি নিয়ে মৃত লোকটিকে ফেলে দিলো। তারপর মৃত লোকটিকে ফেলে দিয়ে অন্য লোকদের কাছে থেকে ২০০ দিনার নিয়ে গেল।
টাকা নিয়ে আলী এক রাজার বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। রাজার বাড়িতে তিনি দেখতে পেলেন বিয়ের আয়োজন এবং পাশের বাড়িতে দেখতে পেলেন কান্নার রোল। তিনি একজন বৃদ্ধ লোককে জিজ্ঞাসা করলো ব্যাপারটা কি? তারপর বৃদ্ধ লোকটি বললো রাজার ময়েরে সঙ্গে আজ পাশের বাড়ির ছলেরে বিয়ে। তিনি আরো বলেন বিয়ে মানে মৃত্যু। কারণ রাজার মেয়েকে যে বিয়ে করে ওই রাতে তার মৃত্যু হয়। আলী ভাবল সে নিজে রাজার মেয়েকে বিয়ে করবে। যে বাড়ির ছেলের সাথে রাজার মেয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সে বাড়ির মানুষরা এই কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।
রাজার মেয়ের সাথে আলীর বিয়ে হয়। আলী মনে মনে ভাবল আজ রাতে সে মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করবে। তাই সে রাতে ঘুমালো না। তারপর রাজকন্যা যখন ঘুমিযে গেল তখন আলী দেখতে পেল রাজকন্যার নাক দিয়ে সুতার মতো কি যেন বের হয়ে আসছে। তারপর ওই সুতাটি সাপের মতো আকার ধারণ করলো। সাপটি যখন আলীকে কামড় দিতে আসছিল তখনই আলী দেয়াল থেকে তরবারি নিয়ে সাপটিকে দু’ভাগ করে দিলো। সাপটির রক্ত যেখানে পড়লো সেখানে আবার সাপ জন্ম নিল। আস্তে আস্তে সাপের পরিমাণ বেড়েই চলল।
হঠাৎ একটি অলৌকিক আওয়াজ শুনতে পেলো আলী। সেই আওয়াজে বলা হলো, বাম দিকে সাপ কেটে তরবারিতে লেগে থাকা রক্ত ডানে মুছো। আবার বাম দিকে সাপ কেটে তরবারিতে লেগে থাকা রক্ত ডানে মুছো। সেই কথা অনুযায়ী কাজ করলো মোহাম্মদ আলী। এভাবে কাজ করার পর আর সাপ জন্ম নিলো না। প্রতিদিনের মতো রাজা যখন লাশ নিতে পাঠাল তখন রাজার লোকরা দেখল আলী জীবিত। আলী তখন রাজার অর্ধেক সম্পত্তির অংশীদার হলো এবং সেখানেই সে বসবাস করতে শুরু করল।