ভাষার জন্য ভালোবাসা এবং আকুতি সব মানুষের। এই ভাষার জন্য আমরা ৯ মাস যুদ্ধ করেছি।
প্রতিটি বাঙালির মনে স্থান করে নেওয়া এই পাঁচজন ভাষা শহীদের মুখোচ্ছবি দৃশ্যমান করে রাখার জন্য বাংলা একাডেমী চত্বরে নির্মিত হয়েছে তাদের আবক্ষ ভাস্কর্য ‘মোদের গরব’। ভাস্কর্যটি ২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। এর মডেল শিল্পীর নাম অখিল পাল এবং ভাস্কর্য নির্মাতার নাম গোপাল চন্দ্রপাল। ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য, টেরাকোটার ম্যুরাল আর রড সিমেন্টের বেদির সমন্বয়ে নির্মিত নান্দনিক মনুমেন্ট এটি। ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১৮ ফুট এবং প্রস্ত ৯ ফুট।
ভাস্কর্যটির প্রথম ধাপ পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি গোলাকার ফুলের পাঁচটি পাপড়ির আদলে গড়া। তার ওপরে আছে টেরাকোটার কাজ। টেরাকোটায় ফুটে উঠেছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় বিভিন্ন মুহূর্ত। ঢাকা মেডিকেলের সামনে ছাত্র জনতার মিছিল। মিছিলে পুলিশের হামলা। গুলিবর্ষণে ছাত্রদের মৃত্যু। এর ঠিক উপরের সারিতে বসানো হয়েছে পাঁচ ভাষা শহীদের ব্রোঞ্জের তৈরি আবক্ষ অবয়ব। ঐ সারির প্রথম ভাস্কর্যটি শহীদ আবুল বরকতের। তারপর আছেন শহীদ আবদুল জব্বার ও শহীদ আবদুস সালামের আবক্ষ মূর্তি।
পেছনের সারিতে আছেন শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ ও শহীদ শফিউর রহমানের আবক্ষ মূর্তি। আবক্ষ ভাস্কর্যের পেছনে আছে একটি ফলক। ফলকটি শহীদের অবয়বের চেয়ে অনেক উঁচু। ফলকটির মাঝে আছে টেরাকোটায় তৈরি মুষ্ঠিবদ্ধ পাঁচটি হাত। হাতের চারপাশ জুড়ে আছে সূর্যরশ্মি, ফুল ও ছড়ানো-ছিটানো বর্ণমালা। ফলকের অপর পাশের প্রথম অংশের টেরাকোটায় দৃশ্যমান আছে শিশুরা বসে পড়াশোনা করছে। মা তার ছেলেকে কোলে নিয়ে আদর করছেন। এর ঠিক উপরের অংশের ফলকের টেরাকোটায় ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো ছেলের লাশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের ম্লান, বিষণ্ন মুখের ছবি ফুটে উঠেছে।
বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউসের উত্তর-পশ্চিম পাশে স্থাপন করা হয়েছে ত্রিমাত্রিক এই মনুমেন্টটি। এটি নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। মোদের গরব মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তারা এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। ভাস্কর্যের চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখেন। অমর একুশের চেতনায় তারা আবেগে আপ্লুত হন। এক মুহূর্তের জন্য হলেও তারা ফিরে যান ’৫২-এর রাজপথে।