দাদা বইটি বন্ধ করতে করতে বললেন, ‘এগুলো তোমাদের বানানো ভূত। এ বইতে তুমি ভূত নিয়ে যা লিখেছ এর কিছুই আমি বিশ্বাস করি না।
আমি বললাম, ‘এখন যদি এনিয়ে আমি তোমাকে যুক্তি দিয়ে বোঝাই যে, অবশ্যই ভূত আছে আর তখনই তুমি বলবে, সুমাইয়া তুমি এতো পাকামো করো না, বয়স আমার কম হয়নি। বেয়াদবির একটা সীমা আছে, ফাজিল মেয়ে কোথাকার। কি দাদা, আমাকে এসব বলে ধমকে তাড়িয়ে দেবে না তুমি?’
দাদা বললেন, ‘যেই জিনিস নেই, যার দেখা কোনোদিন পেলাম না এমন একটা অবিশ্বাস্য বিষয় নিয়ে তর্ক করলে তো বলবই। ’
আমি বললাম, ‘দাদা এ বিষয়টি নিয়ে আমি তোমার সঙ্গে মোটেও তর্ক করবো না। এর প্রমাণ দেবো হাতেনাতে। ’
দাদা কপালে চোখ তুলে বললেন, ‘হাতেনাতে প্রমাণ দেবে মানে? তুমি কি ভূতকে ঘাড়ে ধরে এনে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলবে যে, দাদা এই দেখো ভূত, কত ভয়ঙ্কর ভূত। ’
আমি বললাম, ‘আজ সূর্যটা ডোবা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তারপরই দেবো ভূতের প্রমাণ। ’
দাদা বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, আমিও সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবো ভূতের প্রমাণের জন্য। ’
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলো। গেলাম দাদার ঘরে। দাদা চোখ বন্ধ করে আছেন। আমি গিয়ে একটু কাশি দিতেই দাদা চমকে উঠে বললেন, ‘কে? কে?’
আমি বললাম, ‘দাদা আমি সুমাইয়া। ’
দাদা বললেন, ‘কি, ভূত নিয়ে এসেছ?’ বললাম, ‘নাহ্। প্রমাণ দিতে এসেছি। ’
দাদা বললেন, ‘প্রমাণ? কই, কই প্রমাণ?’
দাদার ঘরে টেবিলে পানিভর্তি জগ আছে, পাশেই আছে গ্লাস। আমি গ্লাসে পানি ভরলাম। তারপর পানিভর্তি গ্লাসটি দাদার হাতে দিয়ে বললাম, ‘দাদা এই ধরো গ্লাস। ’
দাদা হাত বাড়িয়ে ধরলেন। তারপর বললাম, ‘এই পানিভর্তি গ্লাসটি এভাবে ধরে এখন তুমি যাবে ওই মাঠের গোরস্থানে। সেখানে একটা কদম গাছ আছে না? ওই গাছ থেকে একটা কদমফুল ছিঁড়ে নিয়ে আসবে। আর গ্লাসের পানি যেন গ্লাসেই থাকে। বুঝেছ দাদা?’
দাদা হা করে বললেন, ‘এগুলো কি বলছ তুমি? মাথা খারাপ হয়েছে নাকি তোমার।
বললাম, ‘ভূতের প্রমাণ দিতেই এসব করছি, আর কিছু না। আর কোনো কথা নেই এখন রেডি হও তুমি। ’
একহাতে পানিভর্তি গ্লাস, আরেক হাতে একটা লাঠি নিয়ে ঘর থেকে বের হলেন দাদা। এসব দেখে বাড়ির ছোট-বড়ো সবাই ওঠোনে জড়ো হয়েছে।
কেউ বলছে, দাদা লাঠিখানা শক্ত করে ধরো, সামনে কিছু দেখলে দিবে জোরে বাড়ি। সবার মুখে হাসি হাসি ভাব।
দাদি এসে বললেন, ওনি যে কতো বড়ো বীরবাহাদুর তাতো আমি জানি। সারাজীবন আঁচল ধরে ঘরে-বাইরে গেছে আর এখন যাবে গোরস্থানে। এখনই তো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে দেখছি। আচ্ছা যাও যাও দেখি কেমন বেটা তুমি।
দাদা বিড়বিড় করে কি সব পড়ে সারাগায়ে ফু দিয়ে, আল্লাহ্ ভরসা বলে রওনা হলেন।
দাদা উঠোন পেরিয়ে গোরস্থানের পথ ধরে পঞ্চাশ গজের মতো গিয়ে ডেকে ডেকে বলছেন, ‘কইরে তোরা কি আমার পেছনে আছিস নাকি? আমার তো পা চলছে নারে। আমরা চুপ করে বসে রইলাম। কোনো জবাব দিলাম না। ’
প্রায় তিন মিনিট হয়ে গেল, কোনো শব্দ নেই। হঠাৎ করে বাড়ির আওতা-বেড়া ভেঙে হুমড়ি খেয়ে এসে পড়লো দাদা। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে দাদা বললেন, ‘আমাকে ধর। ’
আমি বললাম, ‘দাদা কদমফুল কই? গ্লাস কই? দাদা বললেন, আরে রাখো তোমার ফুল আর গ্লাস। আমি তো গোরস্থানে যেতে পারিনি। আর কাঁপাকাঁপির চোটে গ্লাসে একফোঁটা পানিও ছিল না। একটি ভূত আমার হাত থেকে গ্লাসটা ছো মেরে নিয়ে গেল। পরেই না দিলাম দৌড়। পায়ের জোরে কোনোমতে ফিরে এলাম। ভয়ে আমার কলজে শুকিয়ে গেছে। পানি দাও, পানি খাব। ’
আমি পানি দিতে দিতে বললাম, ‘কিসের ভয় পেলে দাদা?’
দাদা কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ‘কিসের আবার, ভূতের ভয়!’