ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় সব আইনজীবীর লজ্জিত হওয়া উচিত: হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় সব আইনজীবীর লজ্জিত হওয়া উচিত: হাইকোর্ট

ঢাকা: এজলাস চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ শারমিন নিগারের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও বিচার বিঘ্নিত করার ঘটনায় ‘সমস্ত আইনজীবীর লজ্জিত হওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।  

ওই ঘটনায় তলবে ২১ আইনজীবীর হাজিরের পর সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন।

 

আদালতে ২১ আইনজীবীর পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ শারমিন নিগারের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও বিচারকাজ বিঘ্ন সৃষ্টি করার অভিযোগে গত ১০ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ জনের নামে আদালত অবমাননার রুল জারি তাদের তলব করেন হাইকোর্ট। সে তলবে সোমবার তারা আদালতে হাজির হন।  

শুনানির শুরুতে আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ২১ জন হাজির হয়েছেন। আদালত অবমাননার আরেকটি বিষয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখ রয়েছে। দুটি রুলের একসঙ্গে শুনানি হোক।  

তখন আদালত বলেন, দুটা ঘটনা এক না। ওইটা ছিল এক ধরনের ইনসিডেন্ট, এটা আরেক ধরনের ইনসিডেন্ট। ওইটা ছিল অ্যারোগেন্সি, বেয়াদবি। আর এটা হচ্ছে অশ্লীল। কোনো ভদ্রলোক, এসএসসি পাস করা লোকও এ রকমটা বলে না।

আদালত আরও বলেন, ২১ জনের মধ্যে দুজন শিক্ষানবিশ আছেন, তারা কারা? তখন দুজন ডায়াসের সামনে এলে আদালত তাদের নাম, কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আইন পাস করেছেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে কোন আইনজীবী অধীনে আছেন, তা জানতে চান।   

জবাবে, একজন নিজেকে শফিকুল ইসলাম এবং আরেকজন কাজী ইকবাল নামে পরিচয় দিয়ে আদালতের প্রশ্নের উত্তর দেন।

এ সময় এ দুই শিক্ষানবিশ ও তাদের পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘অশ্লীল স্লোগান! কমলাপুরের কুলিরাও তো এমন করে না। এগুলো কোনো ভাষা? সমস্ত আইনজীবী শ্রেণির লজ্জিত হওয়া উচিত। কালো পোশাকধারী কোনো ব্যক্তি এমন ভাষা ব্যবহার করতে পারে? শ্রমিকদের মিছিলেও তো এ রকম স্লোগান দিতে দেখি না। এটা কোনো রাজনৈতিক ভাষা, আন্দোলনের ভাষা! এতো অশ্লীল!’
 
তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল বলেন, সময় দেন (আদালত অবমাননা রুলের ব্যাখ্যা দিতে), তারপরে বিষয়টি আসুক।  

আদালত বলেন, কী আসবে। গত দিনও সময় দিয়েছি। আজকেও সময় দিচ্ছি। কিন্তু আমরা খুবই চিন্তিত।  

এ সময় মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আমারও। জুডিশিয়ারি আমাদের সবার। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

আদালত বলেন, তাই যদি হয়, যে গালি আপনারা (ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা) দিয়েছেন, তা আপনার গায়েও লেগেছে।  

তখন মোমতাজ উদ্দিন ফকির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে কী ঘটেছে, কে স্লোগান দিয়েছে না দিয়েছে, দিয়ে থাকলে কী উদ্দেশ্য ছিল, তা দেখবেন বলে আদালতকে আশ্বস্ত করেন।  

আদালত বলেন, বাংলাদেশের সমস্ত নিম্ন আদালতের গার্ডিয়ান সুপ্রিম কোর্ট। আমাদের দায়িত্ব আছে। আপনাদের সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধা আপনারা বলতে পারেন। আপনাদের বিজ্ঞ বলে, আমাদেরও বিজ্ঞ বলে। বিজ্ঞের সঙ্গে ওই শব্দগুলো যায়?

এক পর্যায়ে হাইকোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের পরিস্থিতি জানতে চাইলে বার কাউন্সিলের সদস্য আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোর্ট চলছে। বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আগামী ২৮ তারিখে সাধারণ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা থাকবেন। ওই সভা থেকে দেশের সমস্ত বারগুলোতে আমরা বার্তা দেব। তারপরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবো ইনশাল্লাহ।

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য জানতে চান আদালত।

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনারা সময় চেয়েছেন, সময়টা দেন। এর মধ্যে বার কাউন্সিলের সদস্য যেটি বললেন ২৮ তারিখে সভার কথা। সব আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিরা আসবেন। আলোচনা করা হবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদক আছেন।

‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আগের দিন এসেছিলেন, সাধারণ সম্পাদক আছেন। উনাদের সঙ্গে বসে কথা বলে দরকার হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবো। যাদের সঙ্গে প্রয়োজন মনে করবো, সবার সঙ্গে কথা বলবো। ’

আদালত বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আছেন?’

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন। পরে ডায়াসের কাছে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটনার সময় উনি (সমিতির সাধারণ সম্পাদক) সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। যেহেতু সমিতির সাধারণ সম্পাদক, তাই তার নাম চলে এসেছে। ২০০৬ সালে যখন আমি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ছিলাম, তখন কোনো ঘটনা ঘটলেই আমাদের নাম চলে আসতো। আদালত অবমাননার রুল হোক, ফৌজদারি মামলা হোক নাম চলে আসতো। অথচ আমরা ছিলামও না।

আদালত বলেন, ‘আমরা দেখবো। হলফনামা দেওয়ার সময় আলাদাভাবে দেবেন। কে কীভাবে ছিল, তা দেখবো। সেদিনের ঘটনা সেখানে শেষ হলে এক রকম হতো। দিন যায়, এটার পটপরিবর্তন হচ্ছে, রূপ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে সবারই ক্ষতি। ’

এরপর দুই শিক্ষানবিশের উদ্দেশে আদালত বলেন, এই দুজন তো এখনো সনদই পাননি। এসব কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততায় তারা কোথায় যাবে? এদের ভবিষ্যৎ কী? যত দেরি হবে সবার ক্ষতি হবে। ওদেরকে বলে দেবেন ওদেরও ক্ষতি হবে।  

তখন আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ রাজা বলেন, ওরা ছিল না বলছে।

এ সময় আদালত বলেন, কোর্টের যে বার্তা, তা বলবেন। আমরা ইচ্ছা করলে সর্বোচ্চ যেতে পারি। আজীবনের জন্য লাইসেন্স বাতিল করে দিতে পারি। বার কাউন্সিলের আচরণবিধির লঙ্ঘন, জাতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের লঙ্ঘন, আদালত অবমাননা তো আছেই। সুতরাং যেতে চাইলে আমরা অনেক যেতে পারি। তাদের কনডাক্ট, বিহেভিয়র...জুনিয়র। আর সারা ৬৪ জেলার বিষয় এটি। তাদের বার্তা দেবেন। এরপর আদালত রুলের ব্যাখ্যা দিতে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২২
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।