ঢাকা: স্বামীর সাক্ষাৎ পেতে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসা এক নারীকে (২৯) দলবদ্ধ ধর্ষণের কথা স্বীকার করে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তিন বিচারক ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
আসামিরা হলেন- বিল্লাল হোসেন (২৫), আল-আমিন হোসেন (২৬), সবুজ (২৬), রাসেল ওরফে মোল্লা রাসেল (২৪) ও শফিকুল ইসলাম (২৬)।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গাবতলী, ডেমরা, বছিলা ও ভোলার তজুমুদ্দিন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আজ রোববার তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আল-আমিন হোসেন, সবুজ, রাসেল ওরফে মোল্লা রাসেল ও শফিকুল ইসলাম স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করে পুলিশ। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম আসামি আল-আমিনের, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরী আসামি সবুজের এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী আসামি শফিকুলের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
অপরদিকে আসামি বিল্লাল হোসেন, রাসেল ওরফে মোল্লা রাসেলের সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অপর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তার তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এর আগে রোববার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নারী স্বামী-সন্তানসহ মোহাম্মদপুরের বছিলায় বসবাস করতেন। চার মাস আগে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে সন্তানদের স্বামীর কাছে রেখে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এর মধ্যে কিছু না জানিয়েই স্বামী তাকে তালাক দেন।
গত ২৫ জানুয়ারি দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলা থেকে তালাকের কারণসহ এ বিষয়ে আলোচনা করতে স্বামীর সাক্ষাতের জন্য ঢাকায় আসেন তিনি। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি তার আগের বাসায় এসে তার স্বামী-সন্তানকে না পেয়ে আশপাশে খোঁজাখুজি করতে থাকেন। বাড়ির মালিক, পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়ারা কেউ তার স্বামী-সন্তানদের ঠিকানা দিতে পারেনি।
এভাবে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত বছিলা চল্লিশফিট, ফিউচার হাউজিং, গার্ডেনসিটি হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং ও এর আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুজি করে সন্তানদের সন্ধান না পেয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি বছিলা চল্লিশফিট তিন রাস্তার মোড় থেকে গাবতলী যাওয়ার জন্য একটি রিকশা ভাড়া নেন। কিন্তু রিকশাওয়ালা ওই নারীকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে না নিয়ে ঢাকা উদ্যান ও বছিলা এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরাতে থাকেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। ওই নারীকে তার স্বামীর বাসা খুঁজে বের করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ও তার অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
প্রায় তিন ঘণ্টা রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আনুমানিক রাত সাড়ে ১২টার দিকে বছিলা ফিউচার টাউনের একটি জায়গায় গিয়ে রিকশাচালক তার সঙ্গীরাসহ ওই নারীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে শ্রমিকদের জন্য তৈরি একটি অস্থায়ী টিনের ঘরে নিয়ে যান। সেখানে পাঁচজন ভিকটিমকে হত্যার হুমকি দিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
এক পর্যায়ে নারীর চিৎকারে এলাকায় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড ও লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা ভিকটিমকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এরপর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে ভিকটিমকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওসিসিতে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতার পাঁচজন ওই নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে ও দুজন আশপাশে অবস্থান করে সহযোগিতা করে। ধর্ষণকারী পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে সহায়তাকারী বাকি দুজনকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে ওই নারীর স্বামীর সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৩
কেআই/এসএ