ঢাকা, রবিবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ জুন ২০২৪, ১৫ জিলহজ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

‘হট্টগোলের’ সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে ভোট পড়েছে অর্ধেক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৩
‘হট্টগোলের’ সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে ভোট পড়েছে অর্ধেক

ঢাকা: হট্টগোল, হামলা, ভাঙচুর, মামলা, সাংবাদিক পেটানো, প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ, ধাক্কাধাক্কির মধ্যে অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪ হাজার ১৩৭টি। এ নির্বাচনে ভোটার ছিল ৮ হাজার ৬০২ জন।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্ত থেকে বিএনপি ও আওয়ামীপন্থীরা দ্বিমুখী অবস্থানে ছিলেন। প্রথমেই দুই পক্ষ দুটি নির্বাচন উপকমিটি ঘোষণা করে। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনিয়রদের বৈঠকের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল চৌধুরীকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। উভয় পক্ষ এ কমিটিকে মেনে নেয়। কিন্তু নির্বাচনের আগের দিন তার পদত্যাগের খবর আসায় সংকটের সৃষ্টি হয়। ফের দুই পক্ষ দুটি কমিটি গঠনের কথা জানায়।

এমন পরিস্থিতিতে বুধবার (১৫ মার্চ) প্রথম দিনের ভোট চলাকালে সাদা (সরকার সমর্থক) ও নীল (বিএনপি সমর্থক) দলের দিনভর দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি, হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এতে আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।

বুধবার সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু করার কথা থাকলেও আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের হট্টগোল, হাতাহাতিতে ভোট শুরু হয় দুপুর পৌনে ১২টায়। প্রথম দিনে দুই হাজার ২১৭টি ভোট পড়ে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা ভোট দেননি।

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট বারের ২০২৩-২৪ মেয়াদের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের ভোট হবে দুই দিন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার)। দুই দিনই সকাল ১০টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের কথা। ভোটগ্রহণের জন্য আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়।

তবে বুধবার সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণের সময় বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন। নতুন করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবি তোলেন তারা। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রেই বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এরপর আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরাও ভোটকেন্দ্রে ঢুকলে শুরু হয় হট্টগোল, এক পর্যায়ে শুরু হয় হাতাহাতি। এ সময় শতাধিক পুলিশ ভোটকেন্দ্রে ঢুকে লাঠিপেটা শুরু করে। ভোটকেন্দ্রের বাইরেও আওয়ামীপন্থী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়।

এ সময় পুলিশের লাঠিপেটার সময় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকা সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হয় পুলিশ। সাংবাদিকদের এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা শুরু করে। এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন।

এ ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) সভাপতি আশুতোষ সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঞার নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা বিষয়টি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে জানান। তখন প্রধান বিচারপতি লিখিত অভিযোগ নিয়ে যেতে বললে পরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। লিখিত অভিযোগের পর প্রধান বিচারপতি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এলআরএফ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ভোটগ্রহণের মধ্যে বুধবার বিকেল সোয়া ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে জড়ো হয়ে সাংবাদিকদের সামনে নির্বাচন পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

সেখান থেকে মিছিল করে এসে নির্বাচনী প্যান্ডেল, আইনজীবীদের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করেন তারা। এক পর্যায়ে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে বিকেল প্রায় সোয়া ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে শুরু হয়ে ৫টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। পরে বিএনপিপন্থীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়।

বিএনপিপন্থীদের দাবি সাধারণ আইনজীবীদের ডেকে সবার মতামত নিয়ে নতুন করে ভোটগ্রহণ করতে হবে। তা না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।

সমিতির নির্বাচনের শেষ দিনের ভোট বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর থেকে শুরু হয়। এরপর দুই পক্ষের আইনজীবী জড়ো হয়ে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ সময় তুমুল উত্তেজনা শুরু হয়।

সকাল দশটার পর থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে শেষ দিনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিএনপিপন্থীরা ভোটে না গিয়ে প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হন। এরপর প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডাকেন।  

আলাদাভাবে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, বারের দুই জন সাবেক সম্পাদক গিয়েছিলেন কথা বলতে। যারা বর্তমানে সভপতি ও সম্পাদক প্রার্থী। প্রধান বিচারপতি বলেছেন-আমি ওনাদের বলেছি, যেহেতু এটা বারের বিষয় ,আমাদের করণীয় নাই। প্রধান বিচারপতির এখানে করার কিছু নেই। আপনারা বারের সিনিয়র যারা আছেন তাদের সাথে আলাপ করে সুষ্ঠুভাবে সুন্দরভাবে করেন। পরিবেশ সবাই মিলে সঠিক রাখার চেষ্ট করেন। এটা প্রাইভেট সংগঠন। বার অ্যাসেসিয়েশনের বিষয় প্রধান বিচারপতির কিছু করার নেই।

এর মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে এসে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ। আর এ ঘটনায় করা পৃথক মামলায় ২২ আইনজীবী আগাম জামিন নিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৩ 
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।