ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সেই রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের ছেলের নামে মামলার নির্দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৩
সেই রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের ছেলের নামে মামলার নির্দেশ

ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তার দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন বেলজিয়ামের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত সানাউল হক। দীর্ঘ ৪৭ বছর পর সেই সানাউলের সম্পত্তির বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে প্রতারণার প্রমাণ পাওয়ায় মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন আদালত।

গত ৩০ মার্চ ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালত এ আদেশ দেন। সেই আদেশ মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) আদালত সূত্রে জানা যায়।

আদেশে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সানাউল হকের ছেলে সুমন ইতাত মামুনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে প্রতিবন্ধী ইরতেফা মামুনের নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে ঢাকার সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা/প্রবেশন অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ বিষয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও দুদককে আগামী ২৫ মের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।  

মামলার নথি থেকে জানা যায়, সানাউল হকের দুই ছেলে ইরতেফা মামুন ও সুমন ইতাত মামুন এবং মেয়ে তাসনিম জাফরুল্লাহ, তৃণা রুবাইয়া মামুন ও সাইদা হুসাইনী মামুন। এদের মধ্যে বড় ছেলে ইরতেফা মামুন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাই প্রতিবন্ধী ভাইয়ের অভিভাবক হিসেবে আদালত থেকে দায়িত্ব পান সুমন ইতাত মামুন। পরবর্তীতে প্রতিবন্ধী ভাইয়ের অভিভাবক হিসেবে তার অংশসহ ওয়ারিশ হিসেবে পাঁচ ভাই-বোনের গুলশানের একটি যৌথ সম্পত্তি বিক্রি করেন তারা।
এরপর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৩ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাড়িও একইভাবে বিক্রয়ের জন্য অনুমতি চেয়ে একটি মামলা করেন ইতাত সুমন মামুন। যেখানে প্রতিবন্ধী ইরতেফা মামুনের অভিভাবক হিসেবে তার অংশ বিক্রির জন্য তার তিন বোনকে বিবাদী করা হয়। এ মামলায় তাদের বাবার নাম আংশিক পরিবর্তন করে লেখা হয় এ এম সানাউল হক।

সেই মোকদ্দমায় সুমন ইতাত মামুন ও তার বোনেরা পরস্পর যোগসাজশে একটি সোলেনামা দাখিল করেন। সেই সোলেনামা নিয়ে সন্দেহ হলে আদালত সানাউল হকের বিস্তারিত পরিচয় জানতে চান। প্রথমে পরিচয় প্রকাশ না করলেও পরে তারা স্বীকার করেন যে তাদের বাবা সানাউল হক বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। গুলশান ও ধানমন্ডির দুটি জমিই তারা পান আইয়ুব খানের শাসনামলে।

আদালতের কাছে সামগ্রিক বিষয় অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় অনুমতি মোকদ্দমাটি নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। একইসঙ্গে অভিভাবক হিসেবে এর আগে গুলশানের বাড়ি বিক্রি করে প্রতিবন্ধী ইরতেফা মামুনের অংশের টাকা কি খাতে খরচ হয়েছে সেই মর্মে একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
সেই আদেশ অনুযায়ী সুমন ইতাত মামুন একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। যেই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবন্ধীর খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা হারে ৬ বছরে মোট ২ কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়।

আদালতের আদেশে বলা হয়, উক্তরূপ হিসাব বিবরণী বানোয়াট, মনগড়া ও কাল্পনিক হওয়ায় সুমন ইতাত মামুনকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি নির্দেশ মতে আদালতে হাজির হয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি। তাই দাখিলীকৃত হিসাব বিবরণী গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবন্ধী ইরতেফা মামুনের পক্ষে তার দেহ ও সম্পত্তির অভিভাবক হিসেবে সুমন ইতাত মামুনকে ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল নিযুক্তির আদেশ রহিত করে আদেশ দেন আদালত।  

আদেশে প্রতিবন্ধী ভাই এর সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুমন ইতাত মামুনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় রাষ্ট্রপক্ষে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে মামলা দায়ের করতে বলা হয়। তাছাড়া দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দেন আদালত।  

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা অতিথি হিসেবে ছিলেন বেবেজিয়ামের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায়। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বদলে যান সানাউল হক। সানাউল হককে অত্যন্ত স্নেহ করতেন বঙ্গবন্ধু। কথিত আছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও তাকে রাষ্ট্রদূত করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তিনি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তার বাড়ি থেকে বের করে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেই ঘটনা উল্লেখ করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৩
কেআই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।