ঢাকা: ভোট নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভের সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বিএনপিন্থী আইনজীবীদের হামলায় আহত হয়েছেন আওয়ামীপন্থী এক আইনজীবী।
বুধবার (৩ মে) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত আইনজীবী আতাউর রহমান আওয়ামী লীগের পল্লবী থানার আইন বিষয়ক সম্পাদক বলে জানা গেছে।
এদিন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার প্রাঙ্গণে নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা অবস্থান নেন। উভয়পক্ষের আইনজীবীরা ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত হন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদূন নুর দুলাল জানান, বিএনপির আইনজীবীদের হামলায় আতাউর রহমান নামের একজন বয়স্ক আহত হয়েছেন। আরও বেশ কিছু আইনজীবী আহত হয়েছেন তবে, আতাউর রহতমান গুরুতর আহত।
তিনি জানান, এ বিষয়ে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা (আওয়ামীলীগ পন্থী আইনজীবীরা) ওপরে ছিলাম। তারা (বিএনপির আইনজীবীরা) ছিল নিচে। আমরা তাদের ওখানে যাইনি, কিন্তু তারা আমাদের এখানে (দোতলায়) এসে হামলা করেছে।
আবদুন নূর দুলাল বলেন, আমাদের আইনজীবীদের ওপর সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। আর সহিংসতা বেশী উস্কে দিয়েছেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করেছি। প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। তবে, হ্যা সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কজল উপস্থিত ছিলেন, আমাদের ফোরামের মহাসচিব উপস্থিত ছিলেন। সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। এটা ছিল সম্মিলিত সমাবেশ।
কামরুল ইসলাম সজল আরও বলেন, বরং আমরা যখন মিছিল নিয়ে দোতলা দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তারা (আওয়ামী লীগ পন্থী আইনজীবীরা) আমাদের ওপর হামলা করেছে, হামলা তো আমরা করিনি তারাই করেছে। ভিডিও ফুটেজ দেখুক হামলা কারা করেছে, তা হলেই পরিষ্কার হবে।
গত ১৫ ও ১৬ মর্চ হট্টগোল, হামলা, ভাংচুর, মামলা, সাংবাদিক পেটানো, প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ ও ধাক্কাধাক্কির মধ্যে অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুদিনব্যাপী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৪টি পদের সব ক’টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল জয়ী হয়েছেন।
দুদিনব্যাপী নির্বাচনের শেষ দিন দিনগত রাতে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
যদিও নির্বাচনে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলো বিএনপি সমর্থকরা। এরপর থেকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আন্দোলন করে আসছে। এর মধ্যে ৩০ মার্চ একদল আইনজীবী তলবি সভা ডেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির সদস্যদের ব্যানারে আয়োজিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
সভায় আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদকে আহ্বায়ক এবং আইনজীবী শাহ্ আহমেদ বাদলকে সদস্য সচিব করে সুপ্রিম কোর্ট বারে ১৪ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটির সদস্য সচিব এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বার সমিতির সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭(৩)(এ) অনুযায়ী ব্যাপক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে বার ভবনের এনেক্স হল রুম ১ ও ২ এ তলবী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। সভায় সাবেক সভাপতি, সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো- এক. ১৫-১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। দুই. মোহাম্মদ মহসিন রশিদকে আহ্বায়ক এবং শাহ্ আহমেদ বাদলকে সদস্য সচিব করে ১৪ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন. এই কমিটি সমিতির সংবিধান অনুযায়ী অপশন ফরম বিতরণ করে ১৫ মে’র মধ্যে নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে এবং ১৪ ও ১৫ জুন সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। চার. প্রধান বিচারপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে বারের ব্যাংক এ্যাকাউন্টসহ বারের রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করবে অন্তবর্তীকালীন কমিটি। পাঁচ. ১ এপ্রিল থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বারের সব কর্মকর্তা–কর্মচারী তথা বারের অফিস অন্তবর্তীকালীন কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২৩
ইএস/এসএ