ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

সিলেটে শিশু সন্তান হত্যায় বাবার যাবজ্জীবন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৯ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
সিলেটে শিশু সন্তান হত্যায় বাবার যাবজ্জীবন

সিলেট: সিলেটে ফাহিম আহমদ (৮) নামে এক শিশুকে হত্যার দায়ে তার বাবা মো. নুর ইসলামের (৪৭) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুরে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শাহাদৎ হোসেন প্রামাণিক এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত নুর ইসলাম নেত্রকোনা জেলার কমলাকান্দা উপজেলার পোগলা ইউনিয়নের সালেঙ্গা পুতিগাঁওয়ের আব্দুল আজিজের ছেলে। বর্তমানে তিনি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কোনাগ্রামের আনোয়ার হোসেন মিফতার বাসার ভাটাড়িয়া বাসিন্দা।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী জয়নাল আবেদীন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নিহত শিশু সাড়ে ৮ বছর বয়সের ফাহিমসহ ৫ সন্তানের জনক দণ্ডিত নুরুল ইসলাম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর দুপুরে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কোনাগ্রামের আনোয়ার হোসেন মিফতার কলোনীর পাশ্ববর্তী বাসার ভাড়াটিয়া মো. আল আমিনের স্ত্রী লুৎফা বেগমের হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে আসামির শিশু সন্তান ফাহিম (৮)। এনিয়ে ওইদিন রাত ৮টার দিকে সালিশ বৈঠকে আসামি নুর ইসলাম সবার সামনে ছেলের জন্য হাতেপায়ে ধরে মাফ চান। পরদিন ২ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় নুর ইসলাম তার শিশু সন্তান ফাহিমকে নিয়ে ধান কাটার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে যান।  

এরপর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জনৈক বজলুর রহমানের মালিকানাধীন এবং নাদিরা হোসেনের নির্মাণাধীন একচালা টিনের ঘরে নাইলনের রশিতে ঝুলন্ত ফাহিমের মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়।  

ঘটনার পর মৃত শিশুর বাবা নুর উদ্দিনকে জনতা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, স্বীকার করেন যে, সালিশে মাফ চাওয়ার বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারেননি। যে কারণে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে ছেলে ফাহিমকে রশিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন।

এ ঘটনায় একমাত্র নুর ইসলামকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন শিশুটির মা ও আসামির স্ত্রী জেসমিন বেগম। ওই বছরের ৩ ডিসেম্বর আসামিকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১২ মার্চ আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন বিয়ানীবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহীন মিয়া।  

২০১৯ সালে মামলাটি সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য দায়রা-৫১৮/১৯ রেকর্ড করা হয়। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত।

বেঞ্চ সহকারী জয়নাল আবেদীন আরও বলেন, অন্যকে ফাঁসাতে নিজের ছেলেকে হত্যার দায়ে নুর ইসলামকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো। কিন্তু সংসারে তিনি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এবং বিবাহযোগ্য ৩ মেয়ে ও এক ছেলে থাকায় মানবিক চিন্তা করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট সরওয়ার হোসেন আবদাল।

বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
এনইউ/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad