ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

যমুনা নদী ছোট করার প্রকল্প প্রস্তাবের নথি হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৩
যমুনা নদী ছোট করার প্রকল্প প্রস্তাবের নথি হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ

ঢাকা: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং প্রাকৃতিক পানি প্রবাহের অন্যতম উৎস যমুনা নদীকে ছোট করতে প্রণয়ন করা প্রজেক্ট প্রপোজালের সব নথি হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত সব নথি আদালতে দাখিল করতে  বলা হয়েছে।

এক রিট আবেদনের শুনানির পর রোববার (২৮ মে) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান।

 ‘যমুনা নদী ছোট করার চিন্তা’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।

পরে আদেশের বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, যমুনা নদীর প্রশস্ততা ছোট করতে চিন্তা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এমনটি একটি সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে আমরা রিট দায়ের করি। আদালত শুনানি নিয়ে সেই প্রজেক্ট প্রপ্রোজালসহ সব নথি আগামী ১০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত সেই নথি দেখে পরবর্তীতে আদেশ দেবেন।


তিনি আরও বলেন, পরিবেশ আইন এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে যারা এ ধরনের প্রজেক্ট প্রকল্প তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে চাকরি আইনে ব্যবস্থা চেয়ে আদেশ প্রার্থনা করেছি। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১১ জুন দিন ঠিক করে দিয়েছেন।

রিটে মন্ত্রী পরিষদ সচিব, পানি উন্নয়ন সচিব, পরিবেশ সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালককে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, যমুনা নদী প্রতি বছর বড় হয়ে যাচ্ছে। বর্ষার সময় নদীটি ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার হয়ে যায়। এত বড় নদীর প্রয়োজন নেই। তাই এটির প্রশস্ততা সাড়ে ৬ কিলোমিটার সংকুচিত করা হবে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং প্রাকৃতিক পানি প্রবাহের অন্যতম উৎস যমুনাকে ছোট করার এমন আইডিয়া এসেছে খোদ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের মাথা থেকে। এজন্য তারা ১১শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও প্রণয়ন করেছেন। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যখন বারবার ব্যয় সংকোচনের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে, সে সময় মন্ত্রণালয়টি এমন প্রকল্প নিয়েছে কোনো ধরনের গবেষণা ছাড়াই। বিশেষজ্ঞরা বিরল এ প্রকল্পকে অবাস্তব বলছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদী ছোট করতে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বাংলাদেশ তো বটেই— পৃথিবীর কোনো দেশেই আগে প্রয়োগের নজির নেই। এ কারণে প্রকল্পটি নিয়ে খোদ সরকারের ভেতরেই প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের একটি পক্ষ বলছে, কোনো ধরনের জরিপ ছাড়া ঋণের টাকায় এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রকল্পের বিরোধিতা করে নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রকল্প নেওয়া ঠিক হবে না, এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। বাড়তে পারে বন্যা প্লাবনের ঝুঁকি। পাশাপাশি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে দেশের অন্যতম স্থাপনা পদ্মা সেতু এবং যমুনা সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি যমুনা নদীর প্রশস্ততা কমাতে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের ওপর পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) একেএম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে কমিশনের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা পিইসি সভায় উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় এ ধরনের আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়। সভায় এই প্রকল্পে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় প্রস্তাব করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।

পিইসি সভা সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর তীর রক্ষা এবং ঝুঁকি প্রশমনে টেকসই অবকাঠামো শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ভাঙন রোধে গাইবান্ধার ফুলছড়ি এবং টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলায় যমুনা নদীতে টপ ব্লকড পারমিয়েবল গ্রোয়েন (টিবিপিজি) অর্থাৎ বাঁধ নির্মাণ করে প্রশস্ততা সাড়ে ৬ কিলোমিটার সংকুচিত করা হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৮৯৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আর বাংলাদেশ সরকার দেবে ২১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা দপ্তর) ড. শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, বর্ষার সময় যমুনা নদী ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার হয়ে যায়। এত বড় যমুনা নদীর প্রয়োজন নেই। যেহেতু এত বড় নদীর দরকার নেই, তাই নদীটাকে ছোট করতে (প্রস্থে) একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে ধরা হয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই হলো যমুনা নদী ব্যবস্থাপনা এবং নদীর প্রশস্ততা কমানো। যমুনা নদীর ফ্লো (প্রবাহ) কীভাবে কমানো যায় সেটি দেখা হবে।  

তিনি বলেন, পাইলট প্রকল্প করে দেখা হবে নদী কতটুকু কমানো যায়। এটি আসলে ধারাবাহিকভাবে কমানো হবে। প্রথমে ছোট আকারে শুরু হবে। যদি টেকসই হয় তাহলে পরে বড় আকারে প্রকল্প নেওয়া হবে- বলে পত্রিকার খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৩
ইএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।