ঢাকা: বিচারালয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই দেশে সঠিক গণতন্ত্র চর্চা ও প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন আপিল বিভাগের বিদায়ী বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান।
তিনি বলেন, কিন্তু সমাজে কোনো কোনো ব্যক্তি বা শ্ৰেণি এ সত্যকে মেনে না নিয়ে বিচার বিভাগেও বিচার কর্মে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টায় লিপ্ত আছে, যা দেশ-জাতি ও গণতন্ত্রের জন্য বাধা হয়ে উঠে।
জীবনের শেষ কর্মদিবসে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়ার পর তিনি এ কথা বলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান একাত্তরে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ এলাকায় সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এমএসএস ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৩ সালে জেলা আদালত ও ১৯৮৭ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
পরে ২০০৯ সালের ৩০ জুন হাইকোর্ট বিভাগে অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ ও দুই বছর পর স্থায়ী হন। ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর তিনি আপিল বিভাগে নিয়োগ পান। ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তার শেষ কর্মদিবস হবে আগামী ৩০ জুন। কিন্তু তিনি হজে যাওয়ার কারণে আজ ছিল তার শেষ কর্মদিবস।
বক্তব্যে বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি স্বাধীনতার জন্য দেশবাসীর সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ প্রত্যক্ষ করেছি, নিজেও সরাসরি অংশগ্রহণ করেছি। যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং আমাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার গুরুত্ব সেই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি নিজেই অনুভব করেছি। বিচার বিভাগে আমার কাজের মাধ্যমে সেই লড়াই চালিয়ে যাওয়া আমার সৌভাগ্যের বিষয়, যেখানে আমি আইনের সামনে ন্যায়, ন্যায্যতা ও সমতার নীতিগুলোকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেছি।
ন্যায় বিচার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে এ বিচারপতি বলেন, আমি আমার আইনজীবী ও বিচারিক অভিজ্ঞতা থেকেই উপলব্ধি করেছি যে, বিচারালয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই দেশে সঠিক গণতন্ত্র চর্চা ও প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কিন্তু সমাজে কোনো কোনো ব্যক্তি বা শ্ৰেণি এ সত্যকে মেনে না নিয়ে বিচার বিভাগেও বিচার কর্মে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টায় লিপ্ত আছে, যা দেশ-জাতি ও গণতন্ত্রের জন্য বাধা হয়ে উঠে। তবে এ কথাও একইসঙ্গে সত্য যে, বিচারকদেরও সত্য উপলব্ধিক করে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার ব্রত নিয়ে কাজ করতে হবে।
আইনজীবী সমিতি নিয়ে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বলেন, সবাই মিলে আইনজীবী সমিতিগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে আইন চর্চার চারণভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করি। তবেই আইন অঙ্গন ও বিচারালয় শক্তিশালী ও পবিত্র হবে।
এ বিচারপতির মতে, বিচারালয়ে আইনজীবীরা যদি যোগ্য ও সৎ হন, তবে বিচারক ও আদালতের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা অসৎ থাকতে পারবেন না।
সুপ্রিম কোর্ট আইনের শাসন ও সংবিধানের সমুন্নত ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশের জনগণের অধিকার রক্ষা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৩
ইএস/আরবি