ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

জোড়া হত্যা মামলায় খায়রুল কবির খোকনের জামিন বহাল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
জোড়া হত্যা মামলায় খায়রুল কবির খোকনের জামিন বহাল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন

নরসিংদী: পদে পদে বাধা, হামলা, ভাঙচুর উপেক্ষা করে অবশেষে আদালতে পৌঁছেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। নরসিংদীতে জোড়া হত্যা মামলায় বিএনপি'র যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকননের জামিন আদেশ বহাল রেখেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন বিএনপ'র যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি খায়রুল কবির খোকন। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক মোস্তাক আহাম্মেদ হাই কোটের জামিন আদেশ বহাল রেখেছেন। আদালত পরবর্তী তারিখে জামিনের শুনানি করবেন।

এদিকে খোকন নরসিংদী আদালতে জামিন নিতে আসবেন এ খবর পেয়ে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা মাইন উদ্দিনের নেতৃত্বে সকাল থেকেই আদালত পাড়া ও  স্টেডিয়ামের সামনে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময়  হাইকোর্টের আইনজীবীরা আদালতে ঢুকতে চাইলে পদবঞ্চিত নেতারা খোকনের আইনজীবীদের ২টি ও একটি পাবলিক গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

আহত আইনজীবীরা হলেন আকলিমা আক্তার, জোনায়েদ উল্লাহ, হোসনে মোবারক, আবদুস সাত্তার ও রোকেয়া আক্তার।

জানা যায়, ছাত্রদলের দুই নেতা হত্যা মামলায় খায়রুল কবির খোকন গত ৫ জুন হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ৬ সপ্তাহের মধ্যে নিন্ম আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।

হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিএনপির নেতা খোকন আদালতে হাজির হবে এমন সংবাদে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত কয়েকশত নেতাকর্মী কাফনের কাপড় পরে সকাল থেকে ডিসি রোড়ে জড়ো হয়ে বিভিন্ন শ্লোগান ও বিক্ষোভ করতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। পরে বিক্ষোভের ধরন সহিংসতায় রূপ নেয়। ঢাকা থেকে আগত খোকনের আইনজীবীদের বহন করা দুইটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকার বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর করে।

এ সময় গাড়ির ভিতর থাকা তিনজন আইনজীবী গুরুতর আহত। তাদের তাণ্ডবে সড়কে গাড়ি চলাচল ও আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পথচারীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে গিয়ে দুইজন পথচারী ও একজন সাংবাদিক আহত হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুটা পিছু হটলে তারা কয়েকঘণ্টা ডিসি রোড় অবরোধ করে রাখে।

দুপুর ২টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা খায়রুল কবির খোকন আদালতে আসেন। এ সময় খোকনের অনুসারীরা তাদের নেতাকে এক নজর দেখার জন্য আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় জমান। পরে আদালত হাইকোর্টের জামিনের আদেশ বহাল রাখেন।

টানা কয়েক ঘণ্টা ছাত্রদলের তাণ্ডবে ডিসি রোডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পথচারী খালেক মিয়া বলেন, এমন পরিস্থিতি আর কখনও দেখিনি। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষকে কষ্ট করতে হচ্ছে। কোর্টে জরুরি কাজ রয়েছে। যেতে পারছি না। কয়েক ঘণ্টা ধরে নিরাপদ স্থানে আটকা পড়ে রয়েছি। তারা দিনের আলোতে যেভাবে লাঠি-সোঁটা, দা-চাপাতি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা দেখে মনে হয় দেশ থেকে আইনের শাসন ওঠে গেছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও  সাবেক এমপি খায়রুল কবির খোকন বলেন, রাজনৈতিক চক্রান্তের জেরে একটি মিথ্যে মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি আদালতে হাজিরার জন্য এসেছি। কিন্তু আমাকে পদে পদে বাধা দেওয়া হয়েছে। সরকারের দালাল মাইন উদ্দিন, অভিসহ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে আমার আইনজীবীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। এতে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের ৫ আইনজীবী আহত হয়েছে। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পদে পদে আমাকে ও আমাদের নেতাকর্মীকে হেনস্থা করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খয়রুল কবির খোকন উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়েছিলেন। আগামী শনিবার জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। শেষ কার্যদিবস হওয়ায় বৃহস্পতিবার নরসিংদী আদালতে আত্মসমর্পণ করে স্থায়ী জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু খায়রুল কবিরের আদালতে প্রবেশ ঠেকাতে পদে পদে বাধা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী ঢাকায় ছিলেন। রাজনিতিকভাবে তাকে মিথ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে। সেই মামলায় খোকন নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক হাইকোটের জামিন আদেশ বহাল রেখেছেন।

তবে পদবঞ্চিত নেতা ও সদ্য বহিষ্কৃত ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাইন উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে অথর্বদের নিয়ে জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। তাদের আন্দোলনে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের দুই সহযোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করেছে। ওই মামলার প্রধান আসামি খায়রুল কবিরসহ সব আসামির গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে তারা কাফনের কাপড় পরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। খোকন নরসিংদী কোর্টে জামিন নিতে আসবেন এই খবরে পদবঞ্চিত নেতারা খোকনে প্রতিহত করতে রাস্তায় নেমে এসেছে।

নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল ) এ টি এম শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, নরসিংদীতে জোড়া হত্যা মামলায় আসামিরা আজকে কোর্টে হাজির হওয়ার কথা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই একটি পক্ষ আদালত এলাকায় অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী মাইন উদ্দিন ভূঁইয়াকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পদ দেওয়া হয়। এতে তার অনুসারী নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেন এবং পরে ভাঙচুর করেন। এরপর কমিটি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন পদবঞ্চিতরা। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ মে বিকেলে পদবঞ্চিত নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করলে দুর্বৃত্তের গুলিতে গুলিতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাদিকুর রহমান ও তার অনুসারী আশরাফুল হক (২২) নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত সাদেকুরের ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, তার স্ত্রী শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩৫ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এখন পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত ৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।