ঢাকা: ঢাকায় বিএনপির শুক্রবারের (২৮ জুলাই) মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার (২৬ জুলাই) দিনভর গ্রেপ্তার ৪৭৩ নেতাকর্মীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকার মহানগর ও জেলার বিভিন্ন থানা থেকে আটক এসব নেতাকর্মীকে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এছাড়া চারজনের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বলছেন, সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখাতেই গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
পক্ষান্তরে রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে পুলিশ যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে, এটিকে ঢালাওভাবে রাজনৈতিক বলা ঠিক হবে না।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর এলাকার ৪১টি থানায় পুরোনো বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৩৬৮ জন এবং চারটি থানা থেকে সন্দেহজনক হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ও ১৫৪ ধারায় ৯৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করে পুলিশ। এছাড়া ঢাকা জেলার সাতটি থানা থেকে মোট ১৩ জন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। যার মধ্যে ৪ জনের একদিনের রিমান্ড ও ৯ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিন নেতাকর্মীদের পক্ষে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে পুরোনো বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় রাজধানীর রমনায় ৩ জন, শাহবাগে ১০ জন, ধানমণ্ডিতে ৬ জন, হাজারীবাগে ২ জন, যাত্রাবাড়ীতে ৫ জন, ডেমরায় ৮ জন, শ্যামপুরে ১০ জন, কদমতলীতে ৭ জন, মতিঝিলে ৯ জন, পল্টনে ৮ জন, রামপুরায় ২ জন, সবুজবাগে ১ জন, তেজগাঁও, হাতিরঝিল ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ১২ জন, পল্লবীতে ৩০ জন, কাফরুলে ৩৯ জন, মোহাম্মদপুরে ১৫ জন, আদাবরে ২ জন, গুলশানে ১২ জন, বনানীতে ১৫ জন, বাড্ডায় ১৪ জন, ভাটারায় ৩ জন, উত্তরখানে ৬ জন, উত্তরা পশ্চিমে ২ জন, তুরাগে ১০ জন, কোতয়ারিতে ২ জন, বংশালে ৯ জন, লালবাগে ৯ জন, চকবাজারে ১ জন, কামরাঙ্গীরচরে ১৫ জন, কলাবাগানে ৬ জন, নিউমার্কেটে ১ জন, দারুস সালামে ৫৭ জন, খিলগাঁও ৭ জন, ক্যান্টনমেন্টে ৩ জন, খিলক্ষেতে ৩ জন, সূত্রাপুরে ১৫ জন, গেন্ডারিয়ায় ২ জন ও ওয়ারী থানায় গ্রেপ্তার ৭ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ও ১৫৪ ধারায় সন্দেহজন হিসেবে ৯৬ জনকে আদালতে পাঠানো হয়। যার মধ্যে রাজধানীর পল্টনে ৪৩ জন, বংশালে ১৮ জন, কোতোয়ারিতে ২৫ জন ও ধানমন্ডি থানা থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে যাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে রাজধানীর শাহজাহানপুর, রূপনগর, ভাসানটেক, মিরপুর মডেল, শেরে বাংলা নগর, বিমানবন্দর, দক্ষিণখান, উত্তরা পূর্ব, শাহ আলী ও মুগদা থানায় বিএনপির কোনো নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়নি।
মহানগর এলাকার বাইরে ঢাকা জেলার ৭টি থানা থেকে মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। যার মধ্যে ৪ জনকে একদিন করে রিমান্ড এবং বাকি ৯ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে যেসব নেতাকর্মী শুক্রবারের মহাসমাবেশে আসছে তাদের ভয়ভীতি দেখাতে গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যাতে মহাসমাবেশ বানচাল করা যায়। এ ধরনের মামলা-হামলা দিয়ে জনস্রোত ঠেকানো যাবে না। এটি শুধু বিএনপির আন্দোলন নয়, জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলন। তাই গণক্ষোভের মুখে এ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।
অপরদিকে ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার করছে। আমি মনে করি বিএনপির অভিযোগ রাজনৈতিক। কারণ সমাবেশে অনেক মানুষই এসেছে, কিন্তু সবাইকে তো গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবকিছুকে ঢালাওভাবে রাজনীতিকীকরণ করা ঠিক হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
কেআই/জেএইচ