ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

বাইকারকে চুবিয়ে হত্যা, ৩ জনের ফাঁসি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
বাইকারকে চুবিয়ে হত্যা, ৩ জনের ফাঁসি

মাদারীপুর: ২০১৩ সালে মাদারীপুরের মোস্তফাপুরে মোটরসাইকেল (বাইক) চালক শাহাদত ঘরামীকে কাদা পানিতে চুবিয়ে হত্যার দায়ে তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় দেন।  

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বরিশালের গৌরনদী উপজেলার রামনগর এলাকার সুলতান শরিফের ছেলে সেন্টু শরীফ (৩৫), কমলাপুর এলাকার মান্নান ফকিরের ছেলে মিরাজ ফকির (৩০) ও মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকার ফজেল শেখ (৫০)। তারা সবাই পলাতক।

মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্র জানায়, গৌরনদী উপজেলার বড় দুলালী এলাকার মোকসেদ ঘরামীর সেজো ছেলে শাহাদত ঘরামী ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। গত ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রতিবেশী মিরাজ ও সেন্টু বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী এলাকায় যাওয়ার কথা বলে শাহাদত ঘরামীর মোটরসাইকেলে চড়েন। পরে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে শাহাদতকে কাদা পানিতে চুবিয়ে হত্যা মোটরসাইকেলটি নিয়ে নেন। পরে ছিনতাইকারীরা মরদেহটি তাদের আত্মীয় ফজেল শেখের মাধ্যমে মাদারীপুরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের সিকি-নওহাটা এলাকার একটি জমিতে ফেলে রেখে পালিয়ে যান।  

এ ঘটনার দুদিন পর নিহতের বাবা মোকসেদ ঘরামী বাদী হয়ে মিরাজ ফকির ও সেন্টু শরীফসহ অজ্ঞাতনামা আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সদর থানা সেই সময়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্যামলেন্দু ঘোষ তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।  

এরপর আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১০ জনের সাক্ষ্য নেন। দীর্ঘ ১০ বছর যুক্তিতর্ক শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায়  সোমবার এ রায় দেন আদালত।

মামলার বাদী মোকসেদ ঘরামী বলেন, ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না আমার। ও (শাহাদত) একজনের কাছ থেকে প্রতিদিন আড়াইশ’ টাকা ভাড়া দেওয়ার চুক্তিতে মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে পরিবারের হাল ধরেছিল। সেন্টু, মিরাজ আর ফজেল মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করে ধরা পড়ার ভয়ে আমার ছেলেকে নিষ্ঠুরভাবে খুন করে। আজ আদালত ওদের ফাঁসির রায় দিয়েছে, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট। তবে একটাই দাবি, এ রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।  

নিহত শাহাদাতের মা জাহু বেগম বলেন, একটা মোটরসাইকেলের জন্য আমার পোলাডারে ওরা মেরে ফেলেছে। যারা আমার ছেলেকে মেরে পার পাওয়ার আশায় ছিল, আজ ওদের বিচার হইছে। একজন মা তার বুকের ধনকে হত্যার রায় পেয়েছে। এখন একটাই চাওয়া, মরার আগে অন্তত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর দেখে মরতে চাই।

মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. সিদ্দিকুর রহমান সিং বলেন, এটি একটি নৃশংস হত্যা মামলা। একটি গরিব ঘরের সন্তানের ভাড়ায় চালানো মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে আসামিরা। তাদের মধ্যে আসামি মিরাজকে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনা হলে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। পরে জামিনে গিয়ে আত্মগোপন করেন তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর যুক্তিতর্ক শেষে আদালত সর্বোচ্চ সাজা দিলেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সন্তুষ্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।