ঢাকা: নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় আসামি আশীষ চৌধুরীকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের জামিন আবেদনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে সোমবার (১৩ নভেম্বর) আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন। পরে সরকারপক্ষ আপিল করে। তখন চেম্বার জজ স্থগিতাদেশ দেন। তারপর যখন ফুল কোর্টে আসে তখন প্রধান বিচারপতি ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে বলেন। এই সময়ে জামিন স্থগিত থাকবে। সেই ছয় মাস শেষ হয়ে যায় ১২ অক্টোবর। ওইদিন নতুন প্রধান বিচারপতি বললেন-কেন বিচার বিলম্ব হচ্ছে তার একটা ব্যাখ্যা নিই। তখন দুই সপ্তাহের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। আজকে ব্যাখ্যাটা এসেছে। বিচারিক আদালত যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটা হচ্ছে, যেহেতু পুরাতন মামলা সাক্ষীদের প্রতি বারবার সমন দেওয়া সত্ত্বেও সাক্ষীরা উপস্থিত হতে পারছে না। অনেক সাক্ষী ট্রেস করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় শুধু বিচারকের পক্ষে ট্রায়াল দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আজ আপিল বিভাগ ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। আর আশীষ চৌধুরীর জামিন বহাল রেখেছেন। এ মামলায় আসামি আশীষ চৌধুরীকে ১০ জানুয়ারি হাইকোর্ট জামিন দেন। ওই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে আবেদন করে। ১৬ জানুয়ারি চেম্বার আদালত তার জামিন স্থগিত করে নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন।
বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
ওই বছরই এক আসামি মামলা বাতিলে হাইকোর্টে আবেদন আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সাল থেকে হাইকোর্টের আদেশে মামলার বিচারকাজ স্থগিত ছিল। ২০১৫ সালে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। তারও সাত বছর পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলার নথি বিচারিক আদালতে ফেরত এলে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নেন বিচারিক আদালত।
এরপর দুই দশকেরও বেশি সময় (২১ বছর) পর গত বছরের ২৮ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেনের আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী।
আলোচিত এ হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আদনান সিদ্দিকী ও ফারুক আব্বাসী।
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার বিচারককে শো’কজ
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি
বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩
ইএস/এসআইএস