ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আন্তর্জাতিক আদালতে কোটা আন্দোলনে গণহত্যার বিচারের ব্যবস্থা নিতে নোটিশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
আন্তর্জাতিক আদালতে কোটা আন্দোলনে গণহত্যার বিচারের ব্যবস্থা নিতে নোটিশ

ঢাকা: নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ব্যবস্থা নিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।  

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এ নোটিশ পাঠান।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

পরে মাহমুদুল হাসান বলেন, চলতি বছরের জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত সরকারের নির্দেশে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি কর্তৃক বাংলাদেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক হাজার মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে হত্যাকাণ্ডের শিকার মানুষের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বহু মানুষের লাশ গুম করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় মাটি-চাপা ও কবর দিয়েছে।

তিনি বলেন, সারা বিশ্বে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, আগ্রাসন ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১২৪টি দেশ এ আদালতের সদস্য । বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এ আদালতের সনদ তথা রোম সনদে সই করে এবং ২০১০ সালের ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এ আদালতের এখতিয়ার অনুমোদন করে। এর ফলে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এখতিয়ারভুক্ত অপরাধ সংঘটিত হলে এ আদালত সেই অপরাধের বিচার করতে পারে এবং অপরাধীকে শাস্তি দেওয়াসহ সম্পদ জব্দ করতে পারে ‌।

এক্ষেত্রে রোম সনদের অনুচ্ছেদ ১৪ অনুযায়ী সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশেকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে রেফার করতে হবে। তাহলেই এ আদালতের প্রসিকিউটররা মামলার আইনি কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।

এ আইনজীবীর মতে, স্থানীয় আদালতে উক্ত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা সম্ভব নয় । এখানে কিছু বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। প্রথমত সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের অধিকাংশ সদস্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছেন । বাংলাদেশের সরকারের পক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অপরাধীদের বাংলাদেশে ফেরত এনে বিচার করা সম্ভব নয় ।  

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউশন কর্তৃক ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপক নজির বা উদাহরণ রয়েছে । বাংলাদেশে রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তন হলে দেখা যায়, রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউশন কর্তৃক অসংখ্য ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়। ফলশ্রুতিতে এ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যদি বাংলাদেশের কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে করা হয়, সেক্ষেত্রে দেখা যাবে ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউশন কর্তৃক রাজনৈতিক বিবেচনায় কোর্ট বা ট্রাইব্যুনাল থেকে উক্ত মামলা প্রত্যাহার করা হতে পারে।  

সুতরাং এসব বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে এ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে যদি উক্ত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যদি নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে করা হয়, সেক্ষেত্রে এ আদালত তার আন্তর্জাতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এমনকি প্রয়োজনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সহায়তায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অভিযুক্তদের আদালতে উপস্থিত করাতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া এ আদালত থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে না।

তাই আইনি নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংগঠিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ মামলা নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় উক্ত বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করা হবে বলে জানান  সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
ইএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।