ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৪০ বছরের আইনি লড়াই শেষ হলো হরেন্দ্রের: ২০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৪
৪০ বছরের আইনি লড়াই শেষ হলো হরেন্দ্রের: ২০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ

ঢাকা: ১৯৮৫ সালে ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তা থাকার সময় নয় জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলার একজন ৮০ বছর বয়সী হরেন্দ্র নাথ চন্দ্র।

 

সেই মামলায় দীর্ঘ ৪০ বছর আইনি লড়াই শেষে ভারমুক্ত হলেন এই বৃদ্ধ। সব আদালতের মতো সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগেও রায় তার পক্ষে গেছে। আর খরচ (কস্ট) হিসেবে তিন মাসের মধ্যে সোনালী ব্যাংক হরেন্দ্র নাথকে ২০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।

সোমবার সোনালী ব্যাংকের আপিল খারিজ করে এ আদেশ দেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।  

আদালতে হরেন্দ্রনাথ চন্দ্রের পক্ষে (বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবায় নিযুক্ত) শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সোবহান।  

পরে ব্যারিস্টার ওমর ফারুক জানান, ৮০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ ব্যক্তি আজ ভারমুক্ত হলেন। ১৯৮৫ সালের একটি ঘটনায় তিনি জেলও খেটেছেন। এরপর সব আদালতেই তিনি জয়ী হয়েছেন। তবে প্রতিটি ধাপেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপিল করেছে। আপিল বিভাগে সর্বশেষ আপিলেও জয়ী হয়েছেন হরেন্দ্র নাথ।  

তিনি বলেন, আমাদের আর্জিতে আদালত তিন মাসের মধ্যে ২০ লাখ টাকা খরচা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।  

আইনজীবীর তথ্য মতে, কুষ্টিয়ার খোকসার হেলালপুর গ্রামের বাসিন্দা হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র। বিএ পাস করে ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক পদে সোনালী ব্যাংকে ঢাকার একটি শাখায় যোগদান করেন। তিন বছর পর পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক হন। এর পর তাকে যাত্রাবাড়ী শাখায় বদলি করা হয়। চাকরিরত অবস্থায় রেমিট্যান্স সংক্রান্ত ১৬ লাখ ১৬ হাজার ১০০ টাকা যাত্রাবাড়ী শাখা থেকে লোকাল অফিসে স্থানান্তর করা হয়। সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা সিল-স্বাক্ষরসহ লিখিতভাবে সমুদয় অর্থ বুঝে নেন। এর কিছুদিন পর ১৯৮৫ সালে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ওই টাকা পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তহবিল তছরুপের অভিযোগে ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে হরেন্দ্রসহ নয়জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরে ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে তাদের সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।  

এর পর গ্রাহকের টাকা জমা না দেওয়ায় অপর একটি মামলায় ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে স্থাপিত ওই কর্মকর্তাকে সাত বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে হরেন্দ্রনাথ জেল খেটে বের হন।  

এর আগে ১৯৮৫ সালের ২৯ জুলাই হরেন্দ্র নাথসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকার বিশেষ আদালতে ফৌজদারি মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। বিচারে ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর বেকসুর খালাস পান হরেন্দ্র নাথসহ সবাই।

মামলায় পরাজিত হয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১৯৮৮ সালে হরেন্দ্রসহ সবার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। সেই মামলায় একতরফা রায়ে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে সমুদয় অর্থ ফেরত দেওয়ার আদেশ দেন আদালত। এর বিরুদ্ধে আবেদন (মিস কেস) করেন হরেন্দ্র নাথ। ১৯৯২ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালত আপিল গ্রহণ করেন; একই সঙ্গে বিচারিক আদালতের আদেশ বাতিল করেন। এর পর ওই রায়ের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংক ২০১৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে। ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট এ আপিল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে মামলার সব আসামি বিভিন্ন সময়ে মারা গেলেও একমাত্র বেঁচে আছেন হরেন্দ্র নাথ।  

গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সেটি সোমবার খারিজ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২৪
ইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।