ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বাংলায় যুগোপযোগী হচ্ছে সাক্ষ্য আইন

মেহেদী হাসান পিয়াস, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫
বাংলায় যুগোপযোগী হচ্ছে সাক্ষ্য আইন ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের আরো অনেক কিছুর মতো অপরাধের ধরনেরও পরিবর্তন হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এখন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে একবারেই লোকচক্ষুর আড়ালে।

আবার প্রযুক্তির কল্যাণেই এসব অপরাধ ও অপরাধী ধরা পড়ছে।
 
কিন্তু অপরাধের ধরনের পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি অপরাধ প্রমাণে অপরিহার্য ‘সাক্ষ্য আইন’-এর। প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো বিদ্যমান ‘সাক্ষ্য আইনে’ অপরাধ প্রমাণে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে বিচার সংশ্লিষ্টদের। এমনকি অপরাধ প্রমাণ করতে না পারায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।
 
আর সে কারণেই ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রণীত ‘সাক্ষ্য আইন’ যুগোপযোগী করার কাজ হাতে নিয়েছে আইন কমিশন। যুগোপযোগী করার পাশাপাশি আইনটি ইংরেজি থেকে সম্পূর্ণ বাংলায় করা হচ্ছে। কাজটি সম্পন্ন হলে অপরাধ প্রমাণের কাজ আরো সহজ হবে বলে মনে করছে আইন কমিশন।
 
আদালতে কোনো অপরাধ বা বিরোধ, কোনো অপরাধের বিচার বা কোনো বিচারের নিষ্পত্তির জন্য সাক্ষ্য অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
 
সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা একটা বড় কাজ হাতে নিয়েছি। ১৮৭২ সালের ‘সাক্ষ্য আইন’ নতুন আঙ্গিকে করার চেষ্টা করছি। এটা অনেক কঠিন কাজ।
 
বর্তমান সাক্ষ্য আইনে অনেক সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই এখন প্রামাণ্য দলিল ছাড়াও সাক্ষ্য হিসেবে অডিও-ভিডিও উপস্থাপন করা হচ্ছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়েও সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। কিন্তু আমাদের বিদ্যমান আইনটিতে তার সুযোগ নেই। তাই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যুক্ত করে এ আইনকে যুগোপযোগী করাই হবে আমাদের কাজ।
 
ইউরোপের অনেক দেশ এ আইনের পরিবর্তন এনেছে। এমনকি প্রতিবেশি দেশ ভারতেও সাক্ষ্য আইনের পরিবর্তন হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান সাবেক এ প্রধান বিচারপতি।
 
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সময় উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশনা গ্রহণ করে আইন পরিবর্তন করার কাজটি হাতে নেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে আইনটি করা হচ্ছে।
 
আইন কমিশনের দায়িত্বই হলো যেসব আইন জনসাধারণের বোধগম্য নয় তা সহজবোধ্য করা। এছাড়া রাষ্ট্রের ম্যান্ডেট হলো সকল আইন বাংলায় করা –বলেন খায়রুল হক।
 
৩০ বছর আগে মোবাইল ফোন, ই-মেলের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল না। বর্তমানে মোবাইল, ই-মেইল আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়। কিন্তু আইনে এগুলো দাখিল করার বিধান না থাকায় জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। আর এ অনুধাবন থেকেই কমিশন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস আদালতে উপস্থাপনের জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।
 
সাক্ষ্য আইন যুগোপযোগী এবং বাংলায় করার কাজটি বর্তমানে কমিশনের সবচেয়ে বড় কাজ। আর এ কাজে বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান কমিশনের সদস্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবির।
 
কাজের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রথমে আইনটি ইংরেজি থেকে ইংরেজি করা হচ্ছে। ১৮৭২ সালে ইংরেজিতে প্রণীত আইনটির অনেক বাক্য এবং শব্দ অস্পষ্ট, দুর্বোধ্য। ভাষাগত জটিলতা কমিয়ে আইনটিকে প্রচলিত ইংরেজিতে করা হচ্ছে। ইংরেজি করা শেষ হলেই আমরা যথাযথ বাংলা করার কাজে হাত দিবো।
 
ফজলে কবির বলেন, এ বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারক, আইনজীবীসহ দেশের বিভিন্ন বারের সভাপতি ও সম্পাদকদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। এ কাজের অংশ হিসেবেই দেশের প্রতিটি জেলার আইনজীবী সমিতিকে তাদের মতামত, পরামর্শ জানানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।    
 
চলতি বছরের শেষের দিকে আইনটি সংশোধন করে আইন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হবে। ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতের সাবেক কয়েকজন বিচারপতি, আইনজীবীসহ অনেকেই এ পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সাক্ষ্য আইনের রিভিউ প্রয়োজন উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনটি রিভিউ হলে ভালো হবে। আদালত সাক্ষ্য হিসেবে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, অডিও-ভিডিও গ্রহণ করলে বিচারপ্রার্থীরা উপকৃত হবে।
 
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত মানুষের নৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক যোগাযোগ অতিমাত্রায় প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। এসব দিক বিবেচনায় সাক্ষ্য আইনে ব্যাপক পরিবর্তন দরকার। সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে এর টেকনিক্যাল দিকগুলো সহজ করতে হবে।

এদিকে আইন কমিশনের এক সূত্র জানিয়েছেন, ইদানিং স্কাইপি ছাড়াও ভাইবার, লাইনসহ বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে অপরাধমূলক ফোনালাপ হচ্ছে। সেগুলো দালিলিক প্রমাণ হিসেবে আনা যায় কি-না সে বিষয়টিও মাথায় রাখছে আইন কমিশন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।