ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ইট ভাটা বিষয়ক আইনের প্রয়োগ চাই

ল’ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
ইট ভাটা বিষয়ক আইনের প্রয়োগ চাই

ইট প্রস্তুত ও ইট ভাটা স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের জন্য দেশে একটি আইন আছে। কিন্তু আইন থাকলেও এ আইনের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়না।

স্থান নির্বিশেষে ক্রমবর্ধমান ইটভাটা দেখে সে ধারণাই হয়।

সরকার ইট প্রস্তুত ও ইট ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এ আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন এখনও সম্ভব হয়নি। আইনে যেসব ক্ষমতা দেয়া আছে সেসব ক্ষমতা প্রয়োগ না করার ফলে আইনের এরকম বরখেলাপ চলছেই।

আইনে আছে, জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স বা অনুমতি ছাড়া কোনো ইট ভাটা স্থাপন করা যাবেনা (৪ ধারা)। কিন্তু দেশের সব ইট ভাটার কি অনুমোদন আছে? অবস্থাদৃষ্টে সেরকম মনে হয়না। দেশের অনেক জেলায় যেভাবে ইট ভাটা স্থাপন করা হচ্ছে তাতে জেলা প্রশাসনের অনুমোদনের বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আর যদি স্থান নির্বিশেষে এভাবে অনুমোদন দেয়াই হয় তবে সেটিও বিবেচনা করা যেতে পারে।
 
চারদিকে কৃষিজমি মাঝখানে ইটভাটা অথবা চারদিকে ঘনজঙ্গল মাঝখানে ইটভাটা এরকম চিত্র হরহামেশাই দেখা যায়। জেলা প্রশাসনের অনুমোদন সাপেক্ষে নিশ্চয় এরকম হওয়ার কথা না।   ঢাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ অথবা সড়ক মহাসড়কের পাশে কৃষিজমিতে অথবা গাছ কেটে এরকম অনেক ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। সারা দেশ জুড়েই রয়েছে এরকম ইট ভাটা।

প্রয়োজনেই মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অবকাঠামো স্থাপন করে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। অবকাঠামো স্থাপন উন্নয়নেরও অংশ। অবকাঠামো নির্মানের জন্য ইট-পাথর-রড-সিমেন্ট ইত্যাদি অপরিহার্য। নি:সন্দেহে প্রয়োজনের খাতিরেই ইটভাটা স্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু একটি প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে চরমভাবে উপেক্ষা করা সমীচীন নয়। তারপরও এ কাজটিই আমরা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

আইনে আছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দিঘি, নদ-নদী, বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটা নিষিদ্ধ ছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে, ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন না করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হিসেবে উল্লেখ আছে (৫ ধারা)। কিন্তু বাস্তবেতো আমার দেখি অধিকাংশ ইট ভাটার জন্যই  কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দিঘি, নদ-নদী, বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়। এসব জায়গা থেকে মাটি তুলেই তৈরি হয় ইট। জলাশয় ভরাট করে তৈরি হয় ইট ভাটা।

এছাড়া ৫(৩) ধারায় ইটের প্রস্তুত প্রণালীও বর্ণনা করা হয়েছে। আইনে বলা আছে, ইটের কাঁচামাল হিসাবে মাটির ব্যবহার হ্রাস করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ইট ভাটায় কমপক্ষে ৫০ (পঞ্চাশ) শতাংশ ফাঁপা ইট (Hollow Brick) প্রস্তুত করতে হবে। কিন্তু আইনের এ বিধান কে মেনে চলছে?

আইনানুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে ইটভাটায় চলাচলের জন্য কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারবেনা। কিন্তু ইট আনা নেয়ার জন্য সরকার ও স্থানীয় সরকারের নির্মিত এসব সড়ক বা পথ দিয়েই চলাচল করছে এসব ভারি যানবাহন। দেশের অনেক উপসড়ক ও রাস্তার বেহাল দশা হওয়ার অন্যতম কারণ এসব যানবাহন। কেউ কেউ হয়তো নিজস্ব সড়ক নির্মান করছে। কিন্তু তা অতি নগন্য।

শুধু ইটই নয়, ইটের তৈরির কাচামালও আনা নেয়া করা হয় এসব সড়ক দিয়ে। সব কাজই হচ্ছে বিদ্যমান সড়ক ব্যহার করে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

ইট  ভাটার জ্বালানি হিসেবে কী ব্যবহার হবে আইনে তাও বলা আছে। কিন্তু আইনের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।   ৬ ধারায় বলা হয়েছ, কোনো ব্যক্তি ইট ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে পারবেনা। কিন্তু দেশের কয়টি কারখানায় এ বিধান মেনে ইট তৈরি হয়।

আইনানুযায়ী আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যেক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি. কৃষি জমি ও  প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় কোনো ইট ভাটা স্থাপন করা যাবেনা। কিন্তু এ বিধানের কি পুরোপুরি প্রয়োগ হচ্ছে? বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা কৃষি জমিতে দেখা যাবে গড়ে উঠেছে কোনো কোনো ইট ভাটা।

যদি কোনো  আইন লংঘন করে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করেন তাহলে তিনি সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড বা ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এছাড়া আইনে অননুমোদিত স্থানে ইট ভাটা স্থাপন করলে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা ও দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড পেতে পারেন। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়াতে ইট ভাটার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। এভাবে ইট ভাটা স্থাপনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অনেক।

ইট ভাটা নিষেধ করা সম্ভব নয়, এর প্রয়োজনও নেই। প্রয়োজন পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে ইট তৈরিকে উদ্বুদ্ধ ও বাধ্যতামুলক করা। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পদ্ধতিতে ইট তৈরিকে নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ করতে হবে। আইনানুযায়ীই ইট ভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।