ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

শিক্ষা অধিকার আইন

ল’ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬
শিক্ষা অধিকার আইন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

শিক্ষায় আমাদের অগ্রগতি আশানুরূপ। স্বাধীনতার পর এক্ষেত্রে আমাদের অর্জন আরো ব্যাপক।

বর্তমানে নারী ও প্রাথমিক শিক্ষায় যে অর্জন তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

দেশে অনেক স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক সময় সরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল শিক্ষার প্রধান পাদপিঠ। বর্তমানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার অবারিত সুযোগ এখন সবার হাতের নাগালে।    

শিক্ষা ব্যবস্থায়ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সময়োপযোগি আধুনিক শিক্ষার দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষায় এসেছে গ্রেড পদ্ধতি। যুক্ত হয়েছে সৃজনশীল পদ্ধতিও। ফলাফলে উন্নতিতো আছেই।

শিক্ষায় এখন রাষ্ট্রীয় মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনামুল্যে পাঠ্যবই ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পৌঁছে যায় বছরের প্রথম দিনেই। বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা এখন রাষ্ট্রের একটি অন্যতম বড় অজর্ন। আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিও বটে।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা আজ আর বলে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। একইভাবে শিক্ষার সাথে রয়েছে আর্থ-সামাজিক অবস্থার সম্পর্ক। শিক্ষাকে একটা পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক করা হলেও শিক্ষার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হওয়াতে এক্ষেত্রে আমাদের গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়নি।

আর্থ-সামাজিক কারণে আমাদের অনেক শিশুই প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেনা। পরিসংখ্যান মতে, আমাদের দেশে স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের  হার ভারত ও শ্রীলংকার চেয়েও বেশি। যদিও এ সংখ্যা পাকিস্তানের চেয়ে কম।

এথেকেই বোঝা যায় যে, শিক্ষায় আমাদের অগ্রগতি হলেও সামাজিক ও আর্থিক কারণে অনেক বাবা-মা-ই তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা আর চালিয়ে যেতে চান না বা পারেননা।

এখন যদিও মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্তই বই বিতরণ করা হয়। কিন্তু তারপরও মাধ্যমিকের দোড়গোড়ায় পৌঁছতে পারেনা অনেক শিক্ষার্থী। সহজ কথায়, শিক্ষা হার বাড়ছে কিন্তু স্কুল থেকে ঝড়ে পড়ার হার কমছে না।   শিক্ষা সুযোগ নয়। শিক্ষা সবার অধিকার।

আমাদের সংবিধানে শিক্ষাকে একটি বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে শিক্ষার কথা বলা আছে। এ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ভাগে অন্তর্ভূক্ত। এ অনুচ্ছেদে মূলত তিনটি বিষয় উল্লেখ আছে। প্রথমত, এখানে আইনানুযায়ী সর্বজনীন, গণমুখি, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার কথা বলা আছে। সংবিধান বলছে, রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করবে। একই সাথে, সমাজের প্রয়োজনের সাথে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য এবং সে প্রয়োজন পুরনের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির ব্যবস্থাও করবে। তৃতীয় বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-তা হচ্ছে, দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা হবে।

সংবিধান বলছে, আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিরক্ষরতামুক্ত একটি সমাজ ও রাষ্ট্র আজ সময়ের দাবী। যে দেশে শিক্ষায় যতো উন্নত তার অর্থনীতিও ততো মজবুত ও দৃঢ়।

আমাদের সংবিধান যদিও শিক্ষাকে অধিকারের মর্যাদা দেয়নি। তবে রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষা সাংবিধানিকভাবে অধিকার না হলেও আদর্শিকভাবে অধিকারের মর্যাদাসম্পন্ন। ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও শ্রীলংকার সংবিধানে শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

২০০২ সালে ভারত সংবিধানের ৮৬তম সংশোধনীর আলোকে ২০০৯ সালে ‘শিক্ষা অধিকার আইন’ প্রণয়ন করেছে। সংবিধানের ২১(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা এ আইন করেছে। ১৩৫ তম রাষ্ট্র হিসেবে ভারত শিশু শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১০ সালে আইনটি কার্যকর হলে শিক্ষা অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ভারতের এ আইনে ৪ থেকে ১৪ বছরের ছেলেমেয়েদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা হবে বাধ্যতামূলক৷

আন্তর্জাতিক আইন ও নীতি অনুযায়ী শিক্ষা একটি অধিকার। জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত শিশু সনদেও শিক্ষা অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে শিক্ষার সুফল থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।