ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘ঘুরে বেড়াবে যুবলীগ নেতা- নো’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
‘ঘুরে বেড়াবে যুবলীগ নেতা- নো’

‘ক্রিমিনাল মামলা তো হবেই। অ্যারেস্ট করবেন না। ঘুরে বেড়াবে যুবলীগ নেতা- নো’। মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলভাঙ্গা গ্রামের বর্গাচাষি শাহানূর...

ঢাকা: ‘ক্রিমিনাল মামলা তো হবেই। অ্যারেস্ট করবেন না।

ঘুরে বেড়াবে যুবলীগ নেতা- নো’।

মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলভাঙ্গা গ্রামের বর্গাচাষি শাহানূর বিশ্বাসের ওপর হামলাকারী বখাটেদের গ্রেফতারে স্বপ্রণোদিত আদেশের সময় এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।  

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সকালে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি পত্রিকা উঁচু করে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দেখেছেন খবরটা। আমরা স্বপ্রণোদিত আদেশ দেবো’।

তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়ে আদালতে বলেন, ‘এফআইআর  হয়েছে’। এ সময় আদালত বলেন, ‘ক্রিমিনাল মামলা তো হবেই। অ্যারেস্ট করবেন না। ঘুরে বেড়াবে যুবলীগ নেতা –নো’।

পরে আদেশে আদালত বলেন, একটি জাতীয় পত্রিকায় ‘মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করাই অপরাধ? দুই পা গেছে, এখন ভিটেছাড়া হওয়ার ভয়’ সংবাদটি আদালতের দৃষ্টি গোচরীভূত হয়েছে। সংবাদটিতে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী রুজু হওয়ার কথা রয়েছে। সে অনুসারে ৭২ ঘণ্টার ভেতর সকল আসামিকে কারাবন্দি (গ্রেফতার) করে আদালতকে ২৭ নভেম্বরের মধ্যে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

আদালত বিবাদী হিসেবে  স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, কালীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নাম উল্লেখ করেন।

ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুই পা হারিয়েছেন শাহানূর বিশ্বাস। এখন ভিটে ছাড়তে হয় কি না, সেই ভয়ও পেয়ে বসেছে তাকে। ওই ঘটনায় প্রথমে মামলা নিতে চায়নি পুলিশ। পরে চেষ্টা-তদবির করে মামলা হলেও এখন আর আসামি ধরছে না পুলিশ। উল্টো শাহানূরের স্বজনদের হুমকি দিচ্ছে আসামিরা’।
‘ঘটনাটি গত ১৬ অক্টোবরের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার নলভাঙ্গা গ্রামের। বখাটেরা শাহানূরকে পিটিয়েগুরুতর আহত করে। শাহানূরের আত্মীয় মো. ইয়াকুব আলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলায় অভিযোগ করেন, আসামিরা প্রথমে লোহার শাবল দিয়ে পিটিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় শাহানূরকে। পরে হাতুড়ি ও ছেনি দিয়ে হাঁটুতে আঘাত করে। দলের অন্যরা লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পেটায়। এতে শাহানূরের মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়। ইয়াকুব সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। ১৬ জনকে আসামি করে দ্বিতীয় মামলাটি করেন ভাই মহিনূর। দুই আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও বাকিরা পলাতক’।

‘শাহানূর এখন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন। পেশায় বর্গাচাষি শাহানূরের দুটি পা হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। তার পায়ে এ পর্যন্ত মোট চারবার অস্ত্রোপচার হয়েছে, ২০ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে’।

‘গতকাল দুপুরে শাহানূরকে ধরে বসিয়ে রেখেছিলেন তার স্ত্রী আর্জিনা। তিনি  বলেন, ‘আমার মেয়ে স্কুলে যায়। ঝঞ্ঝাট-ঝামেলা করে। তো আমি একটু সমাজে কয়েছিলাম। তাইতে এই অবস্থা করিছে’।

‘তিনি বলেন, মামলার এক নম্বর আসামি মো. কামাল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। আসামিদের সবাই তার ভাষায় ‘কামালের লোক’, ‘কামালের পেছনে শক্তি দেয়’। পরিবারটি বাড়ির সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটির জন্য এখন আতঙ্কে অস্থির’।
 
‘খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান আসামি কামাল নলভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। শাহানূর বলেন, এক আসামির ভাই কালীগঞ্জের নলভাঙ্গায় গিয়ে তার বড় ভাই সামাউল বিশ্বাসকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। মেয়ের স্কুলে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ’।

‘আর্জিনা বলেন, ‘যারা মাইরেছে তাগের বাড়ির ওপর দি যাতি হয়। স্কুলে যাওয়ার পথে মেয়েরে আটকে বলিছে, তোমার আব্বু তেজ করিছে তাকে মারিছি। এবার তোমাকে মারব। তার বড় মেয়ে যশোর মহিলা কলেজে সম্মান প্রথম বর্ষে পড়তেন। প্রায় ২৩ মাইল দূরে কলেজ। বখাটেদের উৎপাতে তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছেন’।

‘শাহানূর বারবার বলছিলেন, ‘আমাগেরে সবাই একটু বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিয়েন। আমার যে অবস্থা, রাতে এসে মেরেও দিয়ে যেতে পারে। তাগের যে একটা গুরুপ! তারা সব সময় অস্ত্র নিয়ে ঘোরে’।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
ইএস/এএসআর

**
ঝিনাইদহের বখাটেদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।