মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতির দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এ মন্তব্য করেন।
বাণীতে তিনি বলেন, অপরাধী যত বড় হোক না কেন সে দায়মুক্তি পাবে না।
২০১৫ সালের এ দিনে ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি এস কে সিনহা। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি অবসরে যাবেন।
বাণীতে প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
অন্য বিভাগে হস্তক্ষেপ করে না
‘বিচার বিভাগের (সংবিধানের মূল চেতনা) সীমার বাইরে গিয়ে অন্য বিভাগের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। তেমনিভাবে আমিও প্রত্যাশা করি রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগ বিচার বিভাগের দায়িত্ব পালনে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করবে না। প্রত্যেক বিভাগকে দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে অপরিহার্যভাবে সৃষ্ট শীতল সম্পর্ককে ইতিবাচক দৃষ্টিতে গ্রহণ করলে- প্রত্যেক বিভাগের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রভূত কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিচার বিভাগ জনগণের আস্থা অর্জন করেছে
‘সীমিত সম্পদ ও বাজেট সত্ত্বেও সর্বোচ্চ বিচার সেবা প্রদানে বিচার বিভাগ সাধ্যমত দায়িত্ব পালন করে জনগণের বিশ্বাস অর্জন করেছে। রাষ্ট্রের ক্রান্তিলগ্নে বিচার বিভাগের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত দেশে-বিদেশে নন্দিত হয়েছে। তারওপর গণতন্ত্র সুসংহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিচার বিভাগের স্বাধীন মতামত ও সিদ্ধান্ত প্রদান দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
মামলা জট
‘মামলা বৃদ্ধির একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো প্রচলিত আইনের অস্বচ্ছতা। ত্রুটিপূর্ণ ও সেকেলের আইনের ফলে মামলার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। দেশের নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত মামলার ভারে জর্জরিত। বিগত দু’বছরে মামলা নিষ্পত্তি বৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে দেশের সব আদালতে ২৭, ৬০, ২৪০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। একই সময় ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে দেশের সব আদালতে মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৪, ২৩, ৮৩৮। বিগত ২ বছরে মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৩, ৩৬, ৪০২টি। ফলে নিষ্পত্তির হার শতকরা প্রায় ১৪% বৃদ্ধি পেয়েছে।
আইনের সংষ্কার
‘আইনের নিরন্তর সংষ্কার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির জন্য অপরিহার্য। সে লক্ষ্যে শত বছরের অধিক পুরোনো দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, এনআই অ্যাক্ট একেবারেই সেকেলে। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেনান্সি আইন, নারীও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এবং অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩- এ অনেক ত্রুটি রয়েছে। ওই আইনগুলোর দুর্বলতার কারণে মামলার সংখ্যা অযথা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঙ্গত কারণে এসব আইনের প্রয়োজনীয় সংষ্কার অপরিহার্য।
বিচারকদের আচরণবিধির গেজেট
অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেটে প্রকাশের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সামান্য বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও আশা করছি অচিরেই তা দূর হবে। বিচারকেরা স্বতন্ত্র আচরণ ও শৃঙ্খলা বিধিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে বিচার বিভাগ পৃথককরণের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে।
বিচার বিভাগ এশিয়ার একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হবে
শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গরিব-অসহায়, হত দরিদ্র বিচারপ্রার্থীসহ আপামর বিচারপ্রার্থী জনগণকে বিচার সেবা প্রদানে সব স্তরের বিচারকগণ আরো বেশি সংবেদনশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ক্রমশ বাড়বে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এশিয়ার একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হবে। সবার জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট সবার আরো বেশি সহযোগিতা কাম্য। আগামী দিনে বিচার বিভাগ আরো সমুজ্জ্বল ও গতিশীল হবে-এ আমার হৃদয়ের গভীরতম স্থান থেকে অনুরণিত নির্মল প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭
ইএস/এসএইচ