সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) অ্যাটর্নি জেনারেলকে এর লিখিত কারণ আদালতে দাখিল করতে হবে।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ০৫ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ গেজেট প্রকাশে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু রোববার ফের আরও দুই সপ্তাহের সময় চান অ্যাটর্নি জেনারেল। এরপর আদালত আদেশ দেন।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই। এটি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে এটির বিশেষ অংশ সংশোধন করে পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে’।
‘আমি আদালতের কাছে সে কথাটিই বলেছি, এটি পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আদালত আমাকে লিখিতভাবে উল্লেখ করে দরখাস্ত করতে বলেছেন। আগামীকাল সেটি দেওয়া হবে’।
তিনি বলেন, ‘রুলস ফ্রেইম করবেন তো রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি একবার অপারগতা প্রকাশ করেছেন বা এটার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে জানিয়েছেন। কাজেই ফের যদি এটি করতেই হয়, তাহলে সেটি সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির কাছেই পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো উচিৎ। সেটিই করা হয়েছে’।
বিষয়টি নিয়ে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটাতো আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। তার কারণ, যে রুলস সুপ্রিম কোর্ট চেয়েছিলেন, সেটির কোনো কোনো জায়গায় আইন মন্ত্রণালয় বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার খর্ব হয়। এটি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে জানানো হয়েছে, এখন আর কোনো অসুবিধা নেই। এটি সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করা হবে। তবে পুনর্বিবেচনার বিষয় যেহেতু, গেজেট প্রকাশে একটু সময় লাগতে পারে’।
গত বছরের ০৮ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর হাজির করতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এর মধ্যে ১২ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি।
পরে অবশ্য দুই সচিব আদালতে হাজির হওয়ার পর গেজেট প্রকাশে সময় দেন আদালত।
১৯৯৯ সালের ০২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিলো।
আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ০৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।
গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিলো ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী।
এর পরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। একইসঙ্গে ০৬ নভেম্বরের মধ্যে তা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়।
গত বছরের ০৬ নভেম্বর সে অনুসারে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেননি।
পরে আপিল বিভাগ বিধিমালা চূড়ান্তের বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়ে ০৭ নভেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেন।
ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল আট সপ্তাহের সময়ের আবেদন জমা দেন। যাতে বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন তিনি। সর্বোচ্চ আদালত ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেন।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল গেজেট প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় চাইলে আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করেন। পরে ০১ ডিসেম্বর আইনমন্ত্রী ফিলিপাইনে রয়েছেন বলে ফের এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়। সময় মঞ্জুরের পরও ০৮ ডিসেম্বরের পর থেকে আরও কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নেন রাষ্ট্রপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
ইএস/এএসআর