বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের বৃহত্তর বিশেষ বেঞ্চ।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল এবং আসামিপক্ষে এস এম শাহজাহান, মো. আমিনুল ইসলাম ও শামীম সরদার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন।
এর আগে গত রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে উভয়পক্ষকে আইনি পয়েন্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল সময়ের আবেদন জানালে তা মঞ্জুর করে ০২ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেন।
২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে এ হত্যা মামলায় দায়ের করা সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের শুনানি একসঙ্গে চলছে। রাষ্ট্রপক্ষে অভিযোগপত্র উপস্থাপনের পর থেকে চলছে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বিডিআর সদর দফতরে সংঘটিত ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত ২৭৭ জনের মধ্যে ৬৯ জন আসামির সাজা চেয়ে ফৌজদারি আপিল ও ডেথ রেফারেন্স দায়ের করেন রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত ৪১০ জন আসামির সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আপিল দায়ের করেন তাদের আইনজীবীরা।
২০১৫ সালের ০৪ জানুয়ারি সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ বেঞ্চটি গঠন করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। গত পরদিন ৫ জানুয়ারি বসে ১৮ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করে দেন বিশেষ বেঞ্চ।
দ্রুত আপিল শুনানি করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। এজন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত ২ কপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বিডিআর হত্যা মামলায় মোট সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৫৭৫ জন। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা ১৩৮ জনের পক্ষে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল রাষ্ট্রপক্ষ থেকেই দায়ের করা হয়েছে।
অন্যদিকে অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলামের মাধ্যমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১২৮ জন এবং বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত ১৭৫ জনের পক্ষে ফৌজদারি আপিল দায়ের করা হয়। অ্যাডভোকেট শামীমের মাধ্যমে ফৌজদারি আপিল দায়ের করা হয় ২৩ জনের পক্ষে। এছাড়া পলাতক এবং মৃত আসামি বাদে বাকি ৮৪ জনের পক্ষে বিভিন্ন আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল দায়ের করা হয়।
পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে মোট সাজাপ্রাপ্ত ৫৭৫ আসামির মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন তৎকালীন ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জন বিডিআর সদস্য। তাদের মধ্যে ১৪ জন পলাতক রয়েছেন।
বিশ্বের ইতিহাসে একটি মামলায় সবচেয়ে বেশি আসামির ফাঁসির আদেশের রেকর্ড গড়েছে এ রায়টি।
এছাড়া বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৯ জন পলাতক ও কারাগারে আটক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ জন।
সব মিলিয়ে পলাতক রয়েছেন দণ্ডপ্রাপ্ত ২৩ আসামি।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বর্তমানে বিজিবি, তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করেন বিপথগামী বিডিআর সদস্যরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি বিরল কলঙ্কজনক ঘটনা বলে বিবেচিত।
ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা হয়। বিচারিক কাজ শেষে হত্যা মামলার রায় দেন পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার পাশে কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের বিচারিক আদালত। বিষ্ফোরক মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম একই আদালতে চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
ইএস/এএসআর