রোববার (০৯ জুলাই) বিষয়টি বাংলানিউজকে জানান রিট আবেদনকারীর আইনজীবী সত্যরঞ্জন মণ্ডল।
গত বছরের ০৬ ডিসেম্বর নিজাম হাজারীর পদে থাকার বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের বিভক্ত রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. এমদাদুল হক তার রায়ে রুল মঞ্জুর করে নিজাম হাজারীর পদে থাকাকে অবৈধ ঘোষণা করেন। আর কনিষ্ঠ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান এ বিষয়ে করা রিট ও রুল খারিজ করে দেন। অর্থাৎ তার রায়ে নিজাম হাজারীর এমপি পদ বৈধ।
এরপর আইন অনুসারে রিট আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে তিনি তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করে সেটির নিষ্পত্তির জন্য পাঠান।
‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় নিজাম হাজারীর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু দুই বছর ১০ মাস কম সাজা খেটে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি’।
পরে ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া।
রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ০৮ জুন রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ০৩ আগস্ট এ রুলের শুনানি শেষে ১৭ আগস্ট সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর পদ থাকবে কি-না সে বিষয়ে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট। তবে বিচারিক আদালতের একটি নথি না আসায় রায়ের দিন পিছিয়ে ২৩ আগস্ট ধার্য করা হয়।
অস্ত্র মামলায় বিচার শুরুর আগে নিজাম হাজারী কতোদিন জেল খেটেছেন সে বিষয়ে নথি না পাওয়ায় সেদিনও রায় দেননি আদালত। ২৩ আগস্টের আগেই সেটি দাখিল করবেন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার এবংএর ভিত্তিতে ওইদিন রায় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ২৩ আগস্ট ওই নথিটি দাখিলের পর সেটি নিয়ে শুনানি শেষে ৩০ আগস্ট রায়ের দিন পুনর্নির্ধারণ করেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ৩০ আগস্ট রায় দিতে শুরু করেছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু এর মধ্যে কারাগারে রক্তদান করায় নিজাম উদ্দিন হাজারী কতোদিন সাজা রেয়াত পেয়েছিলেন, সে প্রশ্ন ওঠায় আদালত রায় স্থগিত করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। গত বছরের ০৩ নভেম্বর ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ২২ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু ওইদিন পঞ্চমবারের মতো রায়ের দিন পিছিয়ে ২৮ নভেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
২৮ নভেম্বরও রায় না দিয়ে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় ১৯৯১ সালের ২৪ জানুয়ারি দায়ের করা মামলার সর্বশেষ তথ্য জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। নিজাম হাজারী ঠিক কবে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন সে বিষয়ে আদালতের নথিতে দুই রকম তথ্য থাকায় এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ০১ ডিসেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আদালতে নিজাম হাজারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী ও সত্যরঞ্জন মণ্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী।
শুনানি শেষে ০৬ ডিসেম্বর রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যহবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভেরপর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে। সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য হতে পারেন না। অথচ তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৭
ইএস/এএসআর