ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

রানার দুর্নীতির মামলার রায় দুপুরে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৭
রানার দুর্নীতির মামলার রায় দুপুরে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা (ফাইল ফটো)

ঢাকা: নির্ধারিত সময়ে সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করায় সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণা করা হবে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট)।

ঢাকার ছয় নম্বর বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েসের আদালত দুপুর ২টার দিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নন-সাবমিশন মামলাটির রায় দেবেন।

এটি হবে রানার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম কোনো রায়।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় এক হাজারের বেশি শ্রমিক নিহতের ঘটনায় রানার বিরুদ্ধে হত্যা ইমারত আইন, ভবনের নকশা জালিয়াতি, মাদক সেবন ও অবৈধ অস্ত্র রাখার আরও পাঁচটি মামলার বিচার চলছে।

২০১৩ সালের ২২ মে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, তার স্ত্রী এবং তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে, বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দায়-দেনা ও আয়ের যাবতীয় সম্পদের বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে দুদক। এর আগে থেকেই রানা কাশিমপুর কারাগারে থাকায় তার নামীয় নোটিশ জারি করা যায়নি। পরে কারাগারেই নোটিশ জারির সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

এ সংক্রান্ত আইনি জটিলতার নিরসন করে ২০১৫ সালের ০১ এপ্রিল সোহেল রানার নামীয় ইস্যুকৃত সম্পদ বিবরণীর নোটিশ বিশেষ বাহকের মাধ্যমে কাশিমপুর কারাগারে পাঠায় দুদক। ০২ এপ্রিল নোটিশটি সোহেল রানার কাছে পাঠান জেল সুপার। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করে প্রথমে স্ত্রীর মাধ্যমে সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিলেন রানা।

এ আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলে দুদক জানিয়ে দিলে রানা পরে আর নোটিশের কোনো জবাব কিংবা সম্পদের হিসাব বিবরণী দুদকে দাখিল করেননি। ২৬ এপ্রিল সম্পদের হিসাব বিবরণী ফরমে কোনো তথ্য না দিয়ে তা খালি পাঠান তিনি।  

সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করায় ওই বছরের ২০ মে দুদকের উপ-পরিচালক এস এম মফিদুল ইসলাম সাভার থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলাটির তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম সোহেল রানার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন,২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।

গত ২৩ মার্চ সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে এ মামলার বিচার শুরু করেন আদালত।

মামলাটির ৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

গত ২২ আগস্ট উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে ২৯ আগস্ট রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।

২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল সোহেল রানাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

রানা প্লাজা ধসের পর পরই সোহেল রানার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে এ অভিযোগ অনুসন্ধান করেন দুদকের উপ-পরিচালক মফিদুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক মো. মাহবুবুল আলম।

তাদের দেওয়া অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জানা গেছে, মাত্র ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যেই সাভারে দু’টি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেন রানা। এর একটি ৫০ শতাংশ জমিতে নির্মিত নয়তলা রানা প্লাজা ভবনটি ধসে পড়ে সহস্রাধিক মানুষ নিহত হন। আরেকটি আটতলা রানা টাওয়ার (প্রতি ফ্লোর ৪০০০ বর্গফুট)। সাভারে সোহেল রানার পাঁচতলা আবাসিক ভবন এবং মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার জয়মণ্ডপের গ্রামের বাড়িতে একটি দোতলা ভবনও রয়েছে।

এছাড়া রানা ব্রিকস এবং এম এ কে ব্রিকস নামের দু’টি ব্রিক ফিল্ড রয়েছে তার। সাভার পৌর এলাকা ও পৌর এলাকার বাইরে রানা ও তার মা-বাবার নামে প্রচুর সম্পদ রয়েছে। সাভার বাসস্ট্যান্ডে রানার নামে রানা অয়েল মিল রয়েছে। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস রয়েছে। এছাড়া এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকে পাঁচটি ঋণ হিসাবসহ ২৩টি ব্যাংক হিসাব আছে। এর মধ্যে রানার নামে ৩৫ লাখ টাকার একটি এফডিআরও রয়েছে।

এ অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল প্রায় ১৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক ও তার মা মর্জিনা বেগমের বিরুদ্ধেও পৃথক দু’টি দুর্নীতির মামলা করেছে দুদক।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৭
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।