ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

রায়ের পর্যবেক্ষণ

আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে সরকারি এতিম তহবিলের ২ কোটি, ১০ লাখ, ৭১ হাজার, ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছে।

পরিমাণের দিক থেকে তা বর্তমান বাজার মূল্যে অধিক না হলেও তর্কিত ঘটনার সময়ে ওই টাকার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়া ওই সময়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

আসামি কাজী সলিমুল হক কামাল সংসদ সদস্য ছিলেন। আসামি কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী সরকারি কর্মচারি হয়েও আসামি খালেদা জিয়াকে সরকারি এতিম তহবিলের ব্যাংক হিসাব খুলতে সহায়তা করেন।

পরবর্তীতে ওই হিসাব থেকে দু’টি প্রাইভেট ট্রাস্টের অনুকূলে সরকারি অর্থের চেক বেআইনিভাবে প্রদান করায় খালেদা জিয়া ও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী অপরাধ করতে সহায়তার সামিল।

আসামি তারেক রহমান, মমিনুর রহমান ও শরফুদ্দিন আহমেদ কৌশল অবলম্বন করে সরকারি তহবিলের টাকা একে অপরের সহযোগিতায় আত্মসাত করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন। এর মাধ্যমে এই মামলার ছয়জন আসামির প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়েছেন। আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবেও গণ্য হবেন। অর্থনৈতিক দুর্নীতি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে এবং উহার বাজে প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে সংক্রমিত হয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে কথাগুলো বলেন ঢাকার ৫ম বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মামলাটির পূর্ণাঙ্গ রায় দেন তিনি।

দুটি ধারার অপরাধ প্রমাণিত হলেও একটি ধারায় দণ্ড দেওয়া সম্পর্কে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে খালেদা জিয়া  ও ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি এতিম তহবিলের টাকা দুই ভাগে করে দুইটি ট্রাস্টের অনুকূলে হস্তান্তর করেন।

ওই ট্রাস্টে ১৯৯৩ সালের ১৩ নভেম্বর ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা স্থানান্তর করা হয়। আসামি তারেক রহমান ও মমিনুর রহমান ট্রাস্টের নামীয় এসটিডি ৭ নং হিসেব থেকে টাকা উত্তোলন করে প্রথমে ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় ২ দশমিক ৭৯ একর জমি কেনেন। অবশিষ্ট টাকা প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখায় স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে কাজী সালিমুল হক কামাল ও গিয়াস উদ্দিনের হাত হয়ে আসামি শরফুদ্দিনের হাতে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬শ ৪৩ টাকা ৮০ পয়সা চলে যায় এবং তা আত্মসাৎ করা হয়। এগুলো সবই আসামিদের মিনস রিয়া ইঙ্গিত করে।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, আসামিদের মধ্যে একজন ব্যতীত অপর সবাই সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে সরকারি এতিম তহবিলের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাৎ করেন। দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারার বিধান পর্যালোচনা করলে লক্ষ্য করা যায় যে, ঐ ধারায় সংঘটিত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ড বা যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ড যার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হওয়ার বিষয়েও বিধান রয়েছে।

প্রসিকিউশনপক্ষ থেকে উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় আসামি খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মমিনুর রহমান, কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল এবং ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী উভয় আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার অধীনে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।

তবে ১৮৯৭ সালের জেনারেল ক্লজেস এ্যাক্ট এর ২৬ ধারার বিধান বিবেচনায় গ্রহণ করে পূর্বে বর্ণিত ৫ আসামিকে যেকোনো একটি আইনে দন্ডিত করে আদেশ প্রচার করা বিধেয় হবে বলে আদালত মনে করে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
এমআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।