বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এ মন্তব্য করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
দুপুর ২টার কিছুক্ষণ পরে এজলাসে উঠে আদালত পুরো কক্ষ আইনজীবীতে ভর্তি দেখেন।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা বলে আইনজীবীরা এসেছেন। তারা কেউ কোনো শব্দ করবেন না’।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমি আগেও বলেছিলাম আইনজীবী নির্ধারণ করে দিতে। দুই পক্ষের ত্রিশজন, ত্রিশজন করে থাকতে পারে’।
তখন আদালত বলেন, ‘আমরা দশ মিনিটের জন্য উঠলাম। আপনারা কী করার করেন’।
দুই বিচারপতি তাদের খাস কামরায় চলে যাওয়ার পর কিছু জুনিয়র আইনজীবী আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। পরে আড়াইটার দিকে শুনানি শুরু হয়।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাবেক দুই অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও এএফ হাসান আরিফ।
জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানির পর অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, ‘এই মামলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম মামলা যেখানে এতিমের টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। সে সময়কার রাষ্ট্রনায়ক বা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে খালেদা জিয়া এর দায় এড়াতে পারেন না। মামলার বিচার চলাকালে খালেদা জিয়া এসব ঘটনা অস্বীকার করেননি। তিনি (খালেদা জিয়া) শুধুই বলেছেন যে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ছিলেন না। তিনি কিছু জানতেন না। তার এ বক্তব্য সত্য নয়। তিনি সব জানতেন। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বা সরকারের প্রধান হিসিবে তিনি এর দায় এড়াতে পারেন না। তাছাড়া তিনি যে বাসায় থাকতেন, সেই বাসায়ই তার বড় ছেলে তারেক রহমান থাকতেন। এই মামলায় টাকা আত্মসাতকারীদের একজন তারেক রহমান। সুতরাং খালেদা জিয়া জানতেন না বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্য নয়’।
মাহবুবে আলম আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া নিম্ন আদালতে ১০৯ বার বিভিন্ন অজুহাতে সময় নিয়েছেন। মামলা বাতিল চেয়ে, অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে, আদালত পরিবর্তন চেয়ে বা বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানানোসহ নানা কারণে ২৬ বার সুপ্রিম কোর্টে এসেছেন। তাই আজকে যদি জামিন দিয়ে দেন, তাহলে বলা যাচ্ছে না আদৌ এর আপিল শুনানি হবে কি-না’।
এসময় আদালত বলেন, ‘এটা কেন বলছেন? উভয়পক্ষই দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নিতে পারেন’।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমাদের সুপ্রিম কোর্টের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। আপিল শুনানির জন্য এক মাসের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুত হতে পারে। যেমন বিডিআর বিদ্রোহ মামলার আপিলের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করা হয়েছিল। তাই আমার আবেদন হচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল শুনানি শুরু করা হোক’।
শুনানিতে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং ভারতের বিহারের রাজনীতিক লালু প্রসাদ যাদবের কারাভোগের নজির তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল। জনতা টাওয়ার দুর্নীতি মামলায় এরশাদের এবং পশু খাদ্যে দুর্নীতি মামলায় লালুর কারাদণ্ড হয়।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল সংবাদপত্রে প্রকাশিত নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের একটি বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করে বলেন, ‘এজন্য রিজভীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার’।
এ সময় আদালত বলেন, ‘পত্রিকায় কতো কিছু লেখা হয়। তা দেখে আদালত চালালে হবে না। আমরা তো দেখি, যার পক্ষে রায় যায়, তিনি বলেন ঐতিহাসিক রায়। আর যার বিপক্ষে যায় তিনি বলেন রায় ফরমায়েশি। রাজনীতিবিদরা তো বলে থাকেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। আইনজীবী আর রাজনীতিবিদদের একই অবস্থা’।
এর আগে শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জামিন আবেদনকারীর বয়স ৭৩ বছর। তিনি শারীরিকভাবে বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। তিনি অসুস্থ, একজন নারী। এছাড়া এ আদালতের অনেক নজির রয়েছে, লঘু সাজা হলে আপিল শুনানির জন্য গৃহীত আবেদনের সময় জামিন আবেদন হলে আদালত জামিন দিয়ে থাকেন। এ কারণে আমরা জামিন প্রার্থনা করছি’।
এরপর খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘লঘু সাজা হওয়ায় জামিন চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আইনগতভাবে এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। এছাড়া খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা বলেছেন। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো সনদ দেননি। এ পরিস্থিতিতে জামিন না দিয়ে রেকর্ড আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হোক। আর আদালত মেডিকেল সনদ চাইতে পারেন। সে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত জামিন না দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছি’।
এরপর আদালত বিচারিক আদালতের নথি এলে জামিন আবেদনের ওপর আদেশের জন্য সময় নির্ধারণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
ইএস/এইচএ/
** নথি হাইকোর্টে এলে খালেদার জামিনের ওপর আদেশ
** হাইকোর্টে চলছে খালেদার জামিন শুনানি
** হাইকোর্টে খালেদার জামিন শুনানি দুপুর ২টায়