মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) ফেনীর সেই বহুল আলোচিত নির্মম হত্যা মামলার রায়।
এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে এ মামলায় আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আমিন উল হক ।
হত্যাকাণ্ডের নির্মমতার ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান একরামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমর্থকের সঙ্গে,
তিনি বাংলানিউজ জানান, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খবর পেয়ে ছুটে যাই। শহীদ সালাম স্টেডিয়ামের সামনে যেতেই চোখে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। লোকজন বলাবলি করছিল গাড়িতে উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম ছিল। এতক্ষণে হয়তো তিনি পুড়ে আঙ্গার। এর কিছুক্ষণ পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ফেনী সদর হাসপাতাল মর্গে ।
মর্গের জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়ার পর মরদেহটি যখন চোখে পড়ে তখন রীতিমত আঁতকে উঠতে হয়েছে। একি বীভৎস হত্যাকাণ্ড। পুরো দেহ প্রায় পুড়ে ছাই। পাকস্থলির চর্বিগুলো পুড়ে সেখান থেকে তেল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল ফ্লোরে। তখন মনে হয়েছে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশ হয়তো আর দেখেনি। হত্যাকারীরা প্রথমে একরামের গাড়ি গতিরোধ করে, এরপর অগ্নিসংযোগ করে। অন্যরা বের হতে পারলেও একরামকে বের হতে দেওয়া হয়নি। গাড়ির ভেতরেই পুড়তে থাকে। পুরো দেহ যখন পুড়ে যায়, মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা তখন পুলিশ আসার আগেই সটকে পড়েন।
কি হবে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার। এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ফেনীর সাধারণ মানুষদের মধ্যে। তারা মনে করছে। এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের জন্য দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে কথা হয় ফেনী জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর হাফেজ আহম্মদের সঙ্গে।
তিনি জানান, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে একরাম হত্যা মামলার টানা যুক্তিতর্ক শুরু হয়। সরকারি ও আসামি পক্ষের টানা যুক্তিতর্ক শেষে ১৩ মার্চ মামলার রায় দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ সর্বমোট ৫০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করেছে। সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ পৈশাচিক এই লোমহর্ষক হত্যার আসামিদের মৃত্যুদণ্ডসহ সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করেন তিনি।
তিনি আরো জানান,আসামিদের মধ্যে ৩৬ জন কাষ্টরীতে এবং ১৯ জন পলাতক রয়েছে। এর মধ্যে রুটি সোহেল নামের একজন র্যাবের ক্রস ফায়ারে মারা যায়।
অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল বলেন,রাষ্টপক্ষ কোন আসামির বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত করতে পারেনি। ন্যায় বিচার হলে এ মামলার আসামিরা খালাস পাবেন।
একরামের বড় ভাই রেজাউল হক জসিম জানান, একরামের পরিবার ও স্বজনরা চায় এ হত্যার সঙ্গে জড়িতদেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। তিনি জানান, ‘আমরা হয়তো একরামকে আর পাবনা, আর কোনো মায়ের বুক যাতে খালি না হয়, কোনো ভাই যেন তার ভাইকে না হারায়, তার জন্য ন্যায় বিচার হওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, রায়ে যেন বিচারক মোবাইল ট্রেকিংয়ের বিষয়টি গুরুত্ব দেন। কারণ এর মাধ্যমে প্রকৃত খুনিদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় বিলাসী সিনেমা হলের সামনে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক একরামকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে তাকে বহনকারী গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। ঘটনায় একই দিন রাতে নিহত একরামের বড় ভাই রেজাউল হক জসিম বাদী হয়ে বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন মিনারকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় একই বছরের ২৮ আগস্ট পুলিশ ৫৬ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৮
এসএইচডি/এএটি