এ টাকা পরিশোধের পর বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চকে নির্ধারিত সময়ে অবহিত করেন তাদের আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) এ বিষয়ে মাকসুদার আইনজীবী ইমরান সিদ্দিক জানান, আদালেতর আদেশ অনুসারে তারা এ টাকা পরিশোধ করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হলফনামা দাখিল করেছেন।
একটি জাতীয় দৈনিকে গত বছরের ২২ জুলাই ‘সাড়ে তিন মাস পর পেট থেকে বের হল গজ!’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন ২৩ জুলাই প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদ উল্লা।
ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অস্ত্রোপচারের সাড়ে তিনমাস পর বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ
(শেবাচিম) হাসপাতালে প্রসূতি মাকসুদা বেগমের (২৫) পেট থেকে গজ বের করা হয়েছে। মুমূর্ষু ওই নারীকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পেটের ভেতর গজ থাকায় খাদ্যনালীতে অনেকগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে। ’
মাকসুদা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিলবিলাস গ্রামের মো. রাসেল সরদারের স্ত্রী। গত বছরের মার্চে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তখন তার পেটে গজ রেখে সেলাই করে দিয়েছিলেন চিকিৎসক।
মাকসুদার মা রোকেয়া বেগমের বরাত দিয়ে আইনজীবী শহিদ উল্লা বলেন, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার একমাস পর মাকসুদা পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করায় আবারও ওই ক্লিনিকে যান তারা।
চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করেন। দুই মাস পর খিঁচুনি দিয়ে জ্বর ওঠে। তখন খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। গত জুনে বরিশালেশেবাচিম হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখানো হয়। তখন আলট্রাসনোগ্রাফিতেও কিছু ধরা পড়েনি। এরপর পটুয়াখালীতে এক চিকিৎসককে দেখানোর পর তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। ১২ জুলাইহাসপাতালে মাকসুদার অস্ত্রোপচার হয়। তখন তার পেটের ভেতর থেকে গজ বের করা হয়।
এ ঘটনায় ২৩ জুলাই পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ও পটুয়াখালীর বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকের মালিককে তলব করে রুল জারি করেন একই হাইকোর্ট বেঞ্চ। ১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় তাদের।
আরও পড়ুন>>
** ক্লিনিক মালিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ
পরে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের কাছে ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। সে প্রতিবেদনেই ভুয়া চিকিৎসক রাজন দাসের লাইসেন্সটি ভুয়া হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।
ওই ডাক্তারের লাইসেন্স ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার পর ৬ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন হাইকোর্ট। কিন্তু তার আইনজীবী কয়েকদফা সময় নিয়ে তাকে হাজির করতে পারেনি। এমনকি পুলিশও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে আদালতকে অবহিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
অবশেষে ১১ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন অর্জুন চক্রর্বতী ওরফে রাজন দাস। ওইদিন তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ক্ষতিগ্রস্থ মাকসুদাকে ক্লিনিক মালিক চার লাখ এবং ভুয়া চিকিৎসককে পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শশাঙ্ক শেখর সরকার, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জেসমিনসামসাদ।
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শামসুদ্দিন বাবুল। ভুল অস্ত্রোপচারের শিকার মাকসুদা বেগমের পক্ষে শুনানি করেন ইমরান এ সিদ্দিক। আর ক্লিনিকেরপরিচালক ও নার্সের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮
ইএস/এমএ