গত ২২ মার্চ ছৈয়দ নুরের মুক্তির পর জেলার সর্বত্র এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টায় কক্সবাজার ঈদগাও বাস স্টেশনের পশ্চিম পাশের ডিসি রোডের মাথায় পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। এসময় দোকানপাট ভাঙচুর এবং যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনায় সেদিনই ইদগাও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে ৭৯ জনের নাম উল্লেখ করে কক্সবাজার সদর থানায় বিস্ফোরক ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার ২৭ নম্বর আসামি ছৈয়দ নুর।
ওই মামলা তদন্ত করে ২০১৫ সালের ৩ জুন বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং সরকারি কর্মচারীকে কর্তব্যে বাধা দেওয়ার আইনে কক্সবাজার সদর আদালতে আলাদা দু’টি অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মিনহাজ উদ্দিন ভুইয়া। কক্সবাজার সদর থানার ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি দায়ের করা সেই ১১ নম্বর মামলার ভিন্ন ধারার ৪৫৮ ও ৪৫৮ (ক) অভিযোগপত্র বিচারাধীন যথাক্রমে জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং সদর আদালতে।
মিনহাজ উদ্দিন ভুইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ১ মার্চ ছৈয়দ নুরকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। সেসময় তাকে কক্সবাজার সদর আদালতে বিচারাধীন সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় (অভিযোগপত্র ৪৫৮ (ক) গ্রেফতার দেখানো হয়।
কক্সবাজার আদালতের ওসি কাজী মো. দিদারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, কক্সবাজার সদর আদালতে বিচারাধীন ওই জিআর ১১/১৪ নম্বর মামলায় আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই মামলায় আসামি ১৫ মার্চ জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আদালত জামিন শুনানি না করে তার সঠিক বয়স নির্ণয়ের জন্য সদর থানার কাছে একটি প্রতিবেদন চান। প্রতিবেদন পাওয়ার পর জামিন শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
ওসি দিদারুল আলম বলেন, এই মামলায় বিচার চলতে থাকার মধ্যে ওই আসামি অপর একটি মামলায় (বিশেষ ক্ষমতা আইনের) গ্রেফতার দেখানোর জন্য কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করে বলে শুনেছি।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী নুরুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, আসামিপক্ষ কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের বিচারাধীন বিশেষ ক্ষমতা আইনের এসটি ৩০/১৬ নম্বর মামলায় নিজেকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য ১২ মার্চ আবেদন করে। সেইসঙ্গে জামিনের আবেদনও করে। আদালত সেদিন গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর ২১ মার্চ জামিন শুনানি হলে আদালত এই মামলায় আসামির জামিন মঞ্জুর করেন।
তিনি বলেন, দু’টি মামলাই আলাদা আলাদা আদালতে বিচারাধীন। একটি মামলায় জামিন নিলেও অন্য মামলায় তার জামিন হয়নি। এক্ষেত্রে কারাগার থেকে কী করে তাকে মুক্তি দেওয়া হলো তা বোধগম্য নয়।
যোগাযোগ করা হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী জাফর উল্লাহ ইসলামাবাদী বাংলানিউজকে বলেন, জজ আদালতে বিচারাধীন মামলায় আসামি ছৈয়দ নুরের জামিন হয়েছে। (সদর আদালতে বিচারাধীন) অপর মামলার কী অবস্থা তা জানি না। ছৈয়দ নুর কোথায় আছেন, সে সম্পর্কেও আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল আযম বাংলানিউজকে বলেন, একটি মামলায় পৃথক পৃথক দু’টি অভিযোগ পত্র। দু’টি আদালতে বিচারাধীন। সেক্ষেত্রে একটি আদালত থেকে জামিন নিলেও হাজতিকে মুক্তি দিতে পারে না কারা কর্তৃপক্ষ।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার কারাগারের সুপার বজলুর রশিদ আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, কারাগারে ওই আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলার কাগজপত্র ছিল। তাই জামিনের কাগজ দেখাতে পারায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময: ২১৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
টিটি/এইচএ/