মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৮ মার্চ) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে খালেদা জিয়া এবং সরকারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
শুনানিতে খুরশীদ আলম খান বলেন, প্রধান অভিযুক্তকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের সাজা। অথচ সহযোগীদের দেওয়া হয়েছে ১০ বছরের সাজা। এটা ডিসক্রিমিনেশন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা দুদকের আবেদনের কপি পাইনি। তারপরেও বলি বিশেষ আইনে সাজা বাড়ানোর জন্য রিভিশনের সুযোগ নেই। দুদক এ আইনে আবেদন করতে পারে না।
এরপর আদালত আদেশ দেন।
আদেশের পরে খুরশীদ আলম খান বলেন, আজকে একটি ফৌজদারি রিভিশনের অ্যাপ্লিকেশন দাখিল করেছিলাম। শুনানি হয়েছে। আমরা সেই আবেদনটি দায়ের করেছি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা কেন বাড়ানো হবে না, এই মর্মে আমরা আবেদন করেছিলাম। আমাদের আবেদনের মূল যুক্তিটা ছিল এই মামলায় খালেদা জিয়া মুখ্য আসামি। প্রিন্সিপাল অ্যাকিউসড। উনাকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছর, আর যারা সহযোগী তাদের দেওয়া হয়েছে ১০ বছর। এটা আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়।
‘আদালত দুই পক্ষকেই শুনে আদালত আদেশ দিয়েছেন, মেটারটি এক্সামিন (বিষয়টি নিরীক্ষা) করা উচিৎ। এজন্য চার সপ্তাহের রুল ইস্যু করেছেন, কেন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো হবে না, এই মর্মে। চার সপ্তাহের মধ্যে খালেদা জিয়া এবং রাষ্ট্রকে এর জবাব দিতে বলেছেন আদালত। ’
খুরশীদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়া যে আপিল দায়ের করেছেন এবং তার সহ-আসামি কাজী সলিমুল হক কামাল যে আপিল দাখিল করেছেন, এই দু’টো আপিলের সঙ্গে রুলটিরও শুনানি হবে।
এর আগে সকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুপুর ২টায় শুনানির জন্য ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) আবেদনটি উপস্থাপনের পর আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য বুধবার (২৮ মার্চ) দিন ধার্য করেছিলেন। গত ২৫ মার্চ (রোববার) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করা হয়।
ওইদিন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, এ মামলায় প্রধান আসামিকে দেওয়া হয়েছে ৫ বছর সাজা, কিন্তু সহযোগীদের দেওয়া হয়েছে ১০ বছর করে। সুতরাং প্রধান আসামির সাজাটা অপর্যাপ্ত মনে করে দুদক। এ কারণে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে দুদক এ আপিল করেছে।
এ মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। তবে তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের দশ বছর করে কারাদণ্ড দেন।
এর আগে নিম্ন আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন বিএনপি প্রধান। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে পরদিন ১৩ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক।
পরে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত এ দুই আবেদনের শুনানির জন্য ১৪ মার্চ দিন ধার্য করেন। এরপর ওইদিন আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে জামিনের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে) দায়ের করতে বলে।
চার মাসের জামিন ১৮ মার্চ (রোববার) পর্যন্ত স্থগিত করেন। এ আদেশ অনুসারে পরের দিন ১৫ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক লিভ টু আপিল দায়ের করেন।
এ আপিলের ওপর শুনানি হয় ১৮ মার্চ। শুনানি শেষে আদেশের জন্য ১৯ মার্চ দিন ধার্য করেন আদালত। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আপিলের অনুমতি দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ।
একই সঙ্গে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ আপিলের শুনানির জন্য ৮ মে দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৮/আপডেট ১৮৫১ ঘণ্টা
ইএস/এসএইচ/জেডএস/এইচএ/