সোমবার (২ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ২৮ মার্চ দাখিল করা মুচলেকায় কিছু অস্পষ্টতা থাকায় তা সংশোধন (মোডিফাই) করে ফের সোমবারের মধ্যে দিতে বলেছিলেন আপিল বিভাগ।
মুচলেকা দেখার পর আদালত বিজিএমইএ’র আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এ সময় আদালত বিজিএমইএ’র আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যতদিন চেয়েছেন ততদিন দিয়েছি। বেশিও দিয়েছি। ১২ মাস ১০ দিন। মনে রাখবেন।
আদেশের পর ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৩ সালে বিজিএমইএকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল ভবন ভাঙার জন্য। ওই আদেশটি বাস্তবায়ন করার জন্য এক বছর সময় চেয়েছিলাম। ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত। এই আবেদনটি গ্রহণ করার জন্য আদালত অঙ্গীকারনামা দিতে বলেছিল। আজকে আমরা সংশোধন করে অঙ্গীকারানামা দিয়েছি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে আমাদের এক বছর সময় দিয়েছেন। অর্থাৎ ২০১৩ সালের আদেশটি বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় পেয়েছি। ’
এক প্রশ্নের জবাবে ইমতিয়াজ বলেন, ‘অঙ্গীকারনামায় আমরা বলেছি এরপর আর সময় চাইবো না। দ্বিতীয়ত বলেছি, আদেশ যেটা দেওয়া হয়েছে সেটা অবশ্যই মানবো। তৃতীয়ত বলেছি, এই আন্ডারটেকিংটি আগে বিজিএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল। আদালত এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর সংশোধনটি বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। ’
মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আন্ডারটেকিংয়ে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আর তারা সময় চাইবে না। আর আদালতের যে আদেশ আছে, আপিল বিভাগের সেই আদেশটি তারা বাস্তবায়ন করবে। শেল অ্যাবাইড (মানতে বাধ্য) বলেছে। যদি এর কোনো ব্যত্যয় হয় বিজিএমইএ উইল বি লায়বল। আর্থাৎ তারা লায়বেলিটি নিচ্ছে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য। ’
এক প্রশ্নের জবাবে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত তারা এখানে থাকবে। তারপর এটা তাদের ভাঙতে হবে। বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, এটা তারা নিজেরাই ভাঙবে। ’ গত বছরের ৫ মার্চ বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে কতো সময় লাগবে-তা ৯ মার্চের মধ্যে আদালতে আবেদন করতে বলেছিলেন আপিল বিভাগ। ওইদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে ভবন ভাঙার রায় বহাল রাখেন এবং ১২ মার্চ ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে ছয় মাসের সময় দেন। ওই সময় শেষ হওয়ার আগে ফের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ৮ অক্টোবর বহুতল ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে সাত মাস সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
১২ এপ্রিল ওই সময় শেষ হওয়ার কথা ছিলো। এর আগেই বিজিএমইএর পক্ষ থেকে তৃতীয়বারের মতো আরও একবছর সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। পরে ২৫ মার্চ এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এই বিষয়ে আদেশের জন্য ২৭ মার্চ দিন ঠিক করেছিলেন আপিল বিভাগ। ২৭ মার্চ শুনানি শেষে ২৮ মার্চ আদেশের জন্য রাখেন আপিল বিভাগ। তবে গত ২৮ মার্চ দাখিল করা মুচলেকায় কিছু অস্পষ্টতা থাকায় তা সংশোধন (মোডিফাই) করে ফের সোমবারের মধ্যে দিতে বলেছিলেন আপিল বিভাগ। সে অনুসারে সোমবার সংশোধিত মুচলেকা জমা দেয় বিজিএমইএ।
১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এটি বিজিএমইএ’র প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ান বাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আসে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলের রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন বিজিএমইএকে।
একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনে হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত।
হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ২ জুন তা খারিজ হয়ে যায়।
একই বছরের ৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হওয়ার পর রিভিউ আবেদন জানায় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৮/আপডেট ০৯৫৩ ঘণ্টা
ইএস/এইচএ/