ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জন্মদিনে শিশুটিকে শুধু ছয় ঘণ্টার জন্য পাবে বাবা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
জন্মদিনে শিশুটিকে শুধু ছয় ঘণ্টার জন্য পাবে বাবা মায়ের কোলে শিশু ইয়াসিন/ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শিশুটি রয়েছে তার মায়ের কাছে। কিন্তু প্রথম জন্মদিনে (২৮ এপ্রিল, শনিবার) বাবা চান তার সন্তানের জন্মদিন ঘটা করে পালন করতে। সে জন্য বাবা দ্বারস্থ হন উচ্চ আদালতের।

আদালত বললেন, বাবা জন্মদিন পালন করতে পারবে। তবে জন্মদিনের পর দিন কেবল ৬ ঘণ্টার জন্য।

কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া দম্পতির এ শিশুটিকে সরাসরি পাবেন না বাবা। লাগবে আইনজীবীর মধ্যস্থতা। আইনজীবীর মাধ্যমে নিয়ে ফের আইনজীবীর মাধ্যমেই ফেরত দিতে হবে।
 
১১ এপ্রিল বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের দেওয়া এমন আদেশের কথা বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
 
আদালতে শিশু ইয়াসিন আবদুল্লাহ’র মা তাসমিয়া হাসানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম ও আইনুন নাহার সিদ্দিকা।
 
আর ইয়াসিনের বাবা এহসান আব্দুল্লাহর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার ও সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
 
আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা জানান, পারিবারিকভাবে ২০১৫ সালে তাসমিয়া ও এহসানের বিয়ে হয়। গত বছরের ২৮ এপ্রিল এ দম্পতির সন্তান এহসানের জন্ম হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হলে তাসমিয়া ইয়াসিনকে নিয়ে গুলশানে তার বাবার বাড়িতে চলে যান।
 
গত ২৬ সেপ্টেম্বর ছেলে নিয়ে টিকা দেওয়ার জন্য তাসমিয়া গুলশানের একটি হাসপাতালে গেলে এহসান ও ইয়াসিনের দাদি ওই হাসপাতালে আসেন। কৌশলে এহসান তার ছেলেকে নিয়ে নিজেদের বাসায় চলে যান।
 
দুধের শিশু ইয়াসিনকে পাওয়ার আশায় তাসমিয়া গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করে মহিলা পরিষদের দ্বারস্থ হন। কিন্তু কোনো কিনারা করতে না পেরে তাসমিয়া গত বছরের ২২ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট করেন।
 
হাইকোর্ট প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ইয়াসিনকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে রুল জারি করেন। এ অবস্থায় তাসমিয়া আরও একটি সম্পূরক আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, ইয়াসিনকে যেন প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য কাছে পান এবং বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। কিন্তু আদালত তাসমিয়ার সে আবেদন খারিজ করে দিলে তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
 
গত বছরের ১২ নভেম্বর আপিল বিভাগ খাস কামরায় তাসমিয়ার কথা শোনেন। সেখানে উভয়পক্ষের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।

আইনুন নাহার জানান, আপিল বিভাগ হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশুটিতেকে মায়ের কাছেই রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ওইদিন বিকেল ৫টার মধ্যে শিশুটিকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে বিকেলেই ইয়াসিনকে তার মায়ের কোলে তুলে দেওয়া হয়।
 
এর মধ্যে শিশুটির বাবা একটি আবেদন করেন হাইকোর্টে। আবেদনে বলা হয়, ২৮ এপ্রিল ইয়াসিনের প্রথম জন্মদিন পালন করতে চান। একারণে শিশুটিকে নিজের কাছে রাখার আবেদন করেন।
 
আইনুন নাহার বলেন, দুগ্ধপোষ্য শিশুকে তো একা বাবার কাছে দেওয়া সম্ভব নয়। বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে গেছে। এ কারণে ইয়াসিনের মায়ের পক্ষে তার বাবার বাড়িতে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই আদালত আদেশে বলেছেন, ২৯ এপ্রিল ছয় ঘণ্টার জন্য শিশুটিকে তার বাবার কাছে দিতে। তবে সেটা আইনজীবীর মধ্যস্থতায়। আইনজীবীর জিম্মায় বিকেল ৪টায় নিবেন আবার ছয় ঘণ্টা পরে আইনজীবী ফেরত দিয়ে যাবেন।
 
তিনি আরও বলেন, এখনো এ মামলার চূড়ান্ত শুনানি হয়নি। হাইকোর্টে রুল শুনানি হলে বুঝা যাবে চূড়ান্তভাবে কার কাছে থাকবে ইয়াসিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
ইএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।