এ অবস্থায় ৮ মে (মঙ্গলবার) আপিল বিভাগে জামিনের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। বিএনপির নেতারা তথা খালেদা জিয়ার শীর্ষ আইনজীবীরা আশা করছেন ৮ মে তাদের নেত্রীর জামিন হতে পারে।
কারাবন্দি খালেদা জিয়া বারবার আইনজীবীদের কাছে জানতে চেয়েছেন তার জামিন হচ্ছে না কেন। সর্বশেষ গত ৫ মে (রোববার) বিকেলে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার আইনজীবীরা দেখা করতে গেলে তিনি (খালেদা জিয়া) এ প্রশ্ন করেন। তখন আইনজীবীরা তাকে আশ্বস্ত করেছেন ৮ মে তার জামিন হতে পারে।
সোমবার (৭ মে) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আইনজীবীদের এক অবস্থান কর্মসূচি থেকে খালেদা জিয়াকে আশ্বস্ত করে দেওয়া কথার প্রতিধ্বনি করেছেন বিএনপির শীর্ষ আইনজীবী নেতারা।
কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সব তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আমরা সবাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি মঙ্গলবার আপিল বিভাগ তার জামিন বহাল রাখবেন, এদিন তিনি মুক্তির আদেশ পাবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, মঙ্গলবার তার (খালেদা জিয়া) জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ রয়েছে। আমরা আশা করবো আদালত ন্যায়বিচার করবেন এবং তাকে জামিন দেবেন।
উল্লেখ্য, ৮ মে খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় রয়েছে।
গত ৫ মে বিকেলে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজাক খান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
ওইদিন সাক্ষাৎ শেষে জয়নুল আবেদীন বলেছিলেন, আমি আগেও সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেছি। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তিনি বাম হাত নাড়াতে পারছেন না। কারাগারের পরিবেশে তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাকে দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া দরকার।
‘‘খালেদা জিয়া তাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘আমিতো কোনো অন্যায় করিনি, তাহলে আমার জামিন হচ্ছে না কেন? তখন আইনজীবীরা তাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, ৮ মে অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ’’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান মামলাটিতে খালেদা জিয়ার ৫ বছর কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে খালেদাপুত্র ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে দণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি বা অনুলিপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি এ আবেদন দায়ের করেন।
গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে পরদিন ১৩ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক।
পরে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত এ দুই আবেদনের শুনানির জন্য ১৪ মার্চ দিন ধার্য করেন। এরপর ১৪ মার্চ আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে জামিনের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে) দায়ের করতে বলে চার মাসের জামিন ১৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেন। এ আদেশ অনুসারে পরের দিন ১৫ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক লিভ টু আপিল দায়ের করেন।
এ লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি হয় ১৮ মার্চ। শুনানি শেষে আবেদনের ওপর আদেশের জন্য ১৯ মার্চ সোমবার দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। পরে ১৯ মার্চ আদালত লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে আপিল শুনানির জন্য ৮ মে দিন ধার্য করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৮
ইএস/জেডএস