ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জালিয়াতি করেও রেহাই পায়নি ‘ধর্ষক’ বিল্লাল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৮
জালিয়াতি করেও রেহাই পায়নি ‘ধর্ষক’ বিল্লাল

ঢাকা: ১০ বছরের এক শিশুকে ‘ধর্ষণ’ করেন গাজীপুরের শ্রীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চিনাশুখানিয়া গ্রামের ৪৫ বছর বয়স্ক বিল্লাল ভূঁইয়া। এমন প্রমাণ মিলেছে মেডিকেল টেস্টের প্রতিবেদনে। সেই প্রতিবেদন জাল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন তিনি।
 

কিন্তু বিধিবাম। হাইকোর্টের আদেশ সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে যাওয়ার পর ওই আদালত জালিয়াতির বিষয়টি টের পেয়ে যান।

সঙ্গে সঙ্গে জালিয়াতির এ খবর পৌঁছে যায় হাইকোর্টে।  
 
বুধবার (২৩ মে) বিচারপতি মো. শওকত হোসেন ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামির জামিন বাতিল করে দেন। ফলে জালিয়াতি করে কারাগারে থাকা বিল্লালের মুক্তি মিলছে না।
 
বাংলানিউজকে এমন তথ্য জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল।
 
তিনি বলেন, শুধু জামিনই বাতিল করেননি আদালত। ওই আসামির পক্ষে তদবিরকারককে আগামী রোববার (২৭ মে) তলব করেছেন হাইকোর্ট।  
 
গাজীপুরের নয়নপুর গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে মো. রবিউল ইসলামকে আবেদনে তদবিরকারক হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবেদনকারী আইনজীবী হিসেবে দেখানো হয়েছে মো. জামাল উদ্দিনকে। কিন্তু জামালের যে আইডি দেখানো হয়েছে সেই আইডিতে আসল আইনজীবী হচ্ছেন মো. হারুন অর রশীদ।
 
জাহিদ সরওয়ার বলেন, দু’টি বিষয় জালিয়াতি করেছে। একটি হচ্ছে, মেডিকেল টেস্টের প্রতিবেদন। সেটা ছিলো পজিটিভ। কিন্তু হাইকোর্টের আবেদনে দেওয়া মেডিকেল টেস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের আলামত মেলেনি। এছাড়া অপরটি হচ্ছে আইনজীবীর ভুয়া নাম ব্যবহার।
 
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চিনাশুখানিয়া গ্রামে ওই শিশুকে ঘর ঝাড়ু দেওয়ার কথা বলে প্রবাস ফেরত প্রতিবেশী বিল্লাল ভূঁইয়া (৪৫) ধর্ষণ করে। বিল্লাল ভূঁইয়া একই গ্রামের মৃত রহিম উদ্দিনের ছেলে। পরে বিষয়টি প্রকাশ না করতে হুমকি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে। একপর্যায়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ অনুভব করলে শিশুটি ধর্ষণের কথা তার মা’কে জানায়।
 
পরে মেয়েটির মা ধর্ষক বিল্লাল ভূঁইয়া তার ভাই দুলাল ভূঁইয়ার ছেলে রুবেল ভূঁইয়া (২২) ও মৃত তাজউদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়াকে (৪৫) আসামি করে মামলা করেন। মামলার পর মেয়েটির মেডিকেল টেস্ট করা হয়।
 
জাহিদ সরওয়ার কাজল বলেন, শুরু থেকে বিল্লাল পলাতক ছিলো। এর মধ্যে মেডিকেল টেস্টের প্রতিবেদনে ধর্ষণের প্রমাণও (পজিটিভ) মিলেছে। পরে ১৭ নভেম্বর এ মামলায় চার্জশিট দেয় পুলিশ। এ মামলা এখন সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আছে।
 
এ অবস্থায় চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি আত্মসমর্পণ করেন বিল্লাল। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরবর্তীতে ২৪ এপ্রিল জামিন আবেদন করেন বিল্লাল। ওই আবেদন খারিজ করে দেন গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ।
 
বিচারিক আদালতে খারিজের পর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন বিল্লাল। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে ৯ মে হাইকোর্ট তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
 
হাইকোর্টের জামিন আবেদনে বলা হয়, মেয়েটির বয়স ২১। দুইজন একে অপরকে ভালোবাসে। মেয়ের মা সেটি পছন্দ করেন না। ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেনি। কোনো প্রমাণ নেই মেডিকেল সনদে।  
 
জাহিদ সরওয়ার কাজল বলেন, জামিনের আদেশ নিম্ন আদালতে যাওয়ার পর জালিয়াতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতের নজরে আসে। জালিয়াতির বিষয়টি তারা আমাকে অবহিত করেন এবং প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করেন। আমি বিষয়টি আদালতের কাছে উপস্থাপন করলে আদালত আগের আদেশ প্রত্যাহার করে আসামির জামিন বাতিল করেন।
 
তবে আসামি এখনো বের হতে পারেননি। সে জেলেই আছে বলে জানান জাহিদ সরওয়ার কাজল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৮
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।