ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ধর্ষণের আলামত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠাতে হবে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৮
ধর্ষণের আলামত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠাতে হবে

ঢাকা: ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের ঘটনার অভিযোগের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিএনএসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা ফরেনসিক ল্যাব বা ডিএনএ প্রোফাইলিং সেন্টারে পাঠাতে হবে।

ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্ট বাধ্যতামূলক বলে দেওয়া এক রায়ে এ নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। অভিযোগ দায়েরের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর নমুনা সংগ্রহ করে তা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠাতেও বলা হয়েছে।

 

২০১৫ সালের ২১ মে রাজধানীর কুড়িলে চলন্ত মাইক্রোবাসে এক তরুণীকে  ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে করা রিট মামলার রায়ে এসব নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।

ওই তরুণীর ধর্ষণের পর মানবাধিকার সংগঠন নারীপক্ষ, মহিলা পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আইন ও শালিস কেন্দ্র এবং ব্লাস্ট এর পক্ষ থেকে রিট করা হয়। রিটের পর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত এপ্রিলে প্রকাশ হয়েছে।

ব্লাস্টের আইনজীবী শারমিন আক্তার জানান বলেন, ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত এপ্রিলে প্রকাশিত হয়েছে। এ রায়ে ধর্ষণ মামলার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ১৮টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আদালতের রায়ের সুপারিশ, পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনার আলোকে নীতিমালা তৈরি করতে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ মহাপরিদর্শক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-  ধর্ষণ, যৌন নীপিড়নসহ এ ধরনের তথ্যের ক্ষেত্রে অবিলম্বে থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে (ডিউটি অফিসার) দ্রুত লিখিত অভিযোগ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট থানার আওতায় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে কিনা, তা বিবেচনা করতে গিয়ে কোনোরকম বৈষম্য বা বিলম্ব করা চলবে না।

একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট খুলতে হবে, যেখানে অভিযোগকারী তার অভিযোগ বা তথ্য অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারেন।

সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে যে, কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অভিযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিলম্ব হলে বা অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবেন না।

সব পর্যায়ে ভুক্তভোগীর পরিচিতির গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। প্রত্যেক থানা নারী সমাজকর্মীদের একটি তালিকা তৈরি করবে; যারা সংশ্লিষ্ট থানাকে সহযোগিতা করবে।  

নিরাপত্তা কর্মকর্ত বা সমাজকর্মী, আইনজীবী অথবা ভুক্তভোগীর মনোনীত কারো উপস্থিতিতে তার জবানবন্দি গ্রহণ করতে হবে। তথ্য পাওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কর্তব্যরত কর্মকর্তা বিষয়টি ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারকে অবহিত করবে।

বুঝতে অক্ষম এমন ভুক্তোভোগী নারী, শিশু বা তরুণীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ‘করণীয় সেবা’ (ইন্টারপ্রিটেশন সার্ভিসেস) দিতে হবে।

লিখিত তথ্য গ্রহণের পর কালবিলম্ব না করে তদন্তকারী কর্মকর্তা থানায় উপস্থিত এমন একজন নারী-পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ভুক্তভোগীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে।

ভুক্তভোগীকে দ্রুত সারিয়ে তোলার জন্য ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নমূলক সব মামলায় বাধ্যতামূলকভাবে (মেন্ডেটরি) রাসায়নিক বা ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে।

ঘটনা সংগঠনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিএনএসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা ফরেনসিক ল্যাব বা ডিএনএ প্রোফাইলিং সেন্টারে পাঠাতে হবে।  

তথ্য সংগ্রহে বা ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থার দায়িত্বপালনে যেকোনও ব্যর্থতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। যত দ্রুত সম্ভব তদন্তকাজ শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। নারী, মেয়ে বা শিশুর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ‘১০৯২২’ এর মতো জরুরি সংযোগ নাম্বার বাড়িয়ে সব গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে তার সচিত্র প্রচারণা চালাতে হবে।

এসব বিষয় ছাড়াও রায়ের ১৮ নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা, চিকিৎসা, পরামর্শ এবং নিরাপদে থাকার জন্য প্রত্যেক মহানগরে একটি করে সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৮
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।