সোমবার (২৮ মে) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর ফলে কুমিল্লার নাশকতার দুই মামলায় জামিন মিললেও নড়াইলের মামলায় জামিন পাননি খালেদা।
রোববার (২৭ মে) কুমিল্লায় নাশকতার দুই মামলা ও নড়াইলের মানহানির মামলার ওপর শুনানি শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ ও এ কে এম দাউদুর রহমান মিনা।
আর খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ।
আদেশের পর কুমিল্লার মামলার বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, একটিতে ছয় মাসের জামিন দিয়ে রুল দিয়েছেন, অন্যটিতে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন।
নড়াইলের মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আবেদন করেছিলাম। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দেননি। পরে আমরা হাইকোর্টে আবেদন করেছি। এটা জামিনযোগ্য অপরাধ। হাইকোর্টও জামিন দিতে পারে। আদালত বলেছেন, জজকোর্ট ঘুরে আসেন। জজকোর্ট কোনো আদেশ না দিলে আমরা দেখবো। এখন আমরা নড়াইলে যাবো। সেখানে দরখাস্ত করবো।
নড়াইলের মামলায় আপনাদের কোনো ভুল আছে কিনা এমন প্রশ্নে খন্দকার মাহবুব বলেন, আমাদের কোনো ভুল নেই।
জয়নুল আবেদীন বলেন, নড়াইলের মামলায় ২৫ তারিখ ডেট ছিলো। ওইদিন বন্ধের দিন। তাই কাল (২৭ মে) ছিলো। সেখানে কাল আদেশ দিয়েছে ৩০ তারিখ ডেট রেখেছে। সেটা আমাদের জানায়নি। আমরা সেশন কোর্টে আবেদন করিনি, তাই নট প্রেস করেছেন।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, অফিসিয়ালি খালেদা জিয়া তিনটি মামলায় অ্যারেস্ট। একটা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, আর দুইটায় আজ জামিন হয়েছে। এখন অন্য কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট নেই। আজকের আদেশের পর খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আইনগত বাধা নেই।
তবে এরপর সরকারের যদি অসৎ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে কোনো মামলায় অ্যারেস্ট দেখাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ মে) কুমিল্লার একটি মামলার শুনানি শেষ হয়। আর বাকি দু’টির জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয় রোববার (২৭ মে)।
গত ২০ মে কুমিল্লার দু’টি ও নড়াইলের একটি মামলায় জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ২১ মে ওই কোর্টের কার্যতালিকায় দু’টি আবেদন ওঠে। এ দুই আবেদন শুনানির জন্য ডাকার পর অ্যাটর্নি জেনারেল প্রস্তুতির জন্য সময় চান।
আদালত দুই আবেদনের শুনানির জন্য ২২ মে আড়াইটায় সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু ওইদিন এক মামলায় খালেদার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের শুনানি অসমাপ্ত থাকার পর তা বুধবার (২৩ মে) পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
পরে আবারও শুনানি ২৪ মে পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত। ওইদিন ওই মামলাটির জামিন আবেদন শুনানি শেষ হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি রয়েছেন পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে।
ওই মামলায় আপিলের পর খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। যেটি গত ১৭ মে বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
কিন্তু তারআইনজীবীরা বলছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত আরও ছয়টি মামলা রয়েছে; যেগুলোতে জামিন পেলেই কেবল তিনি মুক্তি পেতে পারেন। এর মধ্যে কুমিল্লায় তিনটি ও নড়াইলে একটি, বাকিগুলো ঢাকার।
এর আগে গত ২০ মে সকালে ছয়টির মধ্যে তিনটি মামলার জামিন আবেদনের হলফনামা করতে হাইকোর্ট বেঞ্চের অনুমতি নেন তারা। এরপর সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় আইকন পরিবহনের একটি বাসের কয়েকজন যাত্রীর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ২০ জন। সেসব ঘটনায় দু’টি মামলা করা হয়।
এসব মামলায় কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির জন্য ৭ জুন দিন নির্ধারিত রয়েছে। পরে এ তারিখ এগিয়ে আনতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেন।
অন্যদিকে নড়াইলের মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
এছাড়া একই সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারেও বিরূপ মন্তব্য করেন তিনি। তার এ বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়।
২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে নড়াইলের চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম নামে এক ব্যক্তি এ সংক্রান্ত খবর পড়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নড়াইল সদর আমলি আদালতে মানহানির মামলা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৮/আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা
ইএস/আরআর