ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বাবা-মাকে একত্রে দেখতে চাই, আদালতে বড় ছেলে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৮
বাবা-মাকে একত্রে দেখতে চাই, আদালতে বড় ছেলে

ঢাকা: প্রায় বছর খানেক ধরে বাবা-মা বিচ্ছিন্ন। এরপর থেকে মায়ের সঙ্গে দেখা নেই নাড়ি ছেঁড়া ধন দুই ছেলের।সন্তানদের নিজ হেফাজতে নিতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন মা। আর হাইকোর্টের নির্দেশে সন্তানদের নিয়ে আদালতে হাজির বাবা ও মায়ের। 

দীর্ঘদিন পর মুখোমুখি হওয়ায় সন্তান ও মায়ের কান্নায় এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিচারপতি, আইনজীবী এমনকি উপস্থিত সাংবাদিকদেরও চোখে জল নেমে আসে।

এক পর্যায়ে আদালতের জিজ্ঞাসার জবাবে বড় ছেলে বললেন-‘আমরা আর কিছু চাই না। বাবা-মাকে একত্রে দেখতে চাই। ’
 
সোমবার (২৫ জুন) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এমন পরিস্থিতির অবতারণা হয়।
 
বড় ছেলের এমন বক্তব্যের পর বাবা-মাকে নিয়ে খাস কামরায় কথা বলেন আদালত। পরে আদেশে আদালত বলেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত শিশু সন্তান দুটি মায়ের হেফাজতে থাকবে। তবে এই সময়ে পিতা শিশু দুটির দেখাশোনা করার অবারিত সুযোগ পাবেন। আগামী ৪ জুলাই পরবর্তী দিন ঠিক করে শিশু দুটিকে হাজির করার নির্দেশ দিয়ে বিষয়টি মুলতবি করেন।
 
২০০২ সালে রাজশাহীর মেয়ে কামরুন্নাহার মল্লিকা এবং মাগুরার ছেলে মেহেদী হাসান বিয়ে করেন। মল্লিকা পেশায় স্কুল শিক্ষিক। আর মেহেদী বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা।  

দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলের বাবা হন মেহেদী হাসান। কিন্তু এক পর্যায়ে এসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে গত বছরের মে মাসে নোটিশের মাধ্যমে বিয়ে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করেন তারা।  
 
তবে এর কিছুদিন আগে দুই সন্তানকে মাগুরায় গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেন মেহেদী। বড় ছেলের বয়স এখন ১২ আর ছোট ছেলে ৯ বছরের।

বোনের তত্ত্বাবধানে মাগুরা জেলা শহরের একটি স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করিয়ে দেন মেহেদী। এর মধ্যে দুই সন্তানের দেখা পাননি মা মল্লিকা। শেষ পর্যন্ত সন্তানদের নিজ হেফাজতে নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন মল্লিকা।
 
এ আবেদনের পর গত ২৯ মে শিশু দুটিকে হাইকোর্টে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও বাবা মেহেদীকে নির্দেশ দেন। ২৫ জুন তাদের হাজির করতে বলা হয়। একই সঙ্গে সন্তানকে কেন মায়ের হেফাজতে দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
 
সেই নির্দেশনা অনুসারে, মাগুরা জেলা পুলিশ শিশু দুটিকে সোমবার আদালতে হাজির করে । এ সময় শিশুদের বাবা-মা, মামা, নানি ও ফুফুসহ আত্মীয়-স্বজনও হাজির হন।

আদালতে মেহেদী হাসানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। আর মল্লিকার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস ও এ কে এম রিয়াদ সলিমুল্লাহ।
 
শুনানির এক পর্যায়ে শিশু দুটির বক্তব্য শুনতে চাইলে বড় ছেলে সালিম সাদমান ধ্রুব আদালতকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আমরা আর কিছু চাই না। বাবা-মাকে একত্রে দেখতে চাই। ’
 
এ সময় শুনানিতে আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আজকে একটা বছর ধরে মা তার সন্তানকে দেখতে পাচ্ছেন না। আজকে যখন কোর্টে হাজির করা হয়েছে তখনও শিশুদের ফুফু তাদের মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বাঁধা দিয়েছেন। এ সময় তিনি সন্তানদের সঙ্গে মায়ের কথা বলার সুযোগ চান।  

‘পরে আদালতের অনুমতি পেয়ে ছেলেদের কাছে এগিয়ে যেতেই  মা দুই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করেন। এ সময় ছেলেরাও দীর্ঘদিন পর মাকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ’

আইনজীবী কাজল বলেন, এ সময় বড়ছেলে হাত বাড়িয়ে বাবাকেও (মেহেদী) ডেকে বলেন, বাবা তুমিও এসো। তুমি আমার কাছে এসো।

এ সময় বাবাও এগিয়ে এলে আদালতের ভেতর এক আবেগ ঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাবা-মা এবং তাদের সন্তানদের জড়িয়ে ধরে কান্নার দৃশ্য দেখে আদালতে উপস্থিত বিচারক, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্যদের চোখেও জল নেমে আসে।
 
এ সময় আদালত বাবা-মাকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, এ দৃশ্য দেখেও কী আপনাদের মন গলে না? আপনারা কী সন্তানের জন্যও নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করতে পারবেন না। সামনে তাকিয়ে দেখেন আপনাদের এ দৃশ্য দেখে সকলের চোখেই পানি  চলে এসেছে।  

এ সময় আদালতের উভয়পক্ষের আইনজীবীসহ শতাধিক আইনজীবী দাঁড়িয়ে সমস্বরে সন্তানদের কথা চিন্তা করে বাবা-মাকে মেনে নেওয়ার দাবি জানান।  

একই সঙ্গে সন্তানদের চাওয়া অনুযায়ী তাদের দাম্পত্য জীবন যাতে বজায় থাকে সেরকম একটি আদেশ দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আর্জি জানান।
  
এ বিষয়ে তখন আদালত দুই ছেলে, বাবা-মা, নানি ও ফুফুর বক্তব্য শুনেন। তারপর বাবা ও মাকে খাস কামরায় ডেকে নিয়ে কথা শুনেন। এরপর আদেশ দেন আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৮
ইএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।