আসামিদের বিরুদ্ধে আনা দুটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে সবাইকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপরটিতে সবাইকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) এ রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে ১৬ জুলাই রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
গত ২৭ মার্চ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষামান রাখেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার আব্দুর নুর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া (৬২), মো. আনিছ মিয়া (৭৬) ও মো. আব্দুল মোছাব্বির মিয়া। আকমল ছাড়া বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন সৈয়দ হায়দার আলী, শেখ মুশফিক কবীর ও ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
আসামি আকমল আলীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবুল হাসান ছিলেন।
রায়ের পর প্রসিকিউটর হায়দার আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ মামলার চার আসামির বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়েছিলো। আজ তার রায় হয়েছে। প্রথম অভিযোগটি ছিলো গণহত্যার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকোলে মৌলভীবাজারে রাজনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫৯ জনকে বেঁধে পিটিয়ে, গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ওই গ্রামে যতগুলো বাড়িঘর ছিল তার সবগুলোই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং ওই গ্রামের যে ক’জন মহিলা ছিলো সবাইকে ধর্ষণ করা হয়। ’
‘এই ঘটনায় প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে তাতে ঘটনাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল চার আসামিকেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। ’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় অভিযোগটি ছিল অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার। রাজনগরের পশ্চিমবাগ গ্রামের চক্রবর্তীদের বাড়িতে ঢুকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে দুইজনকে ধরে নিয়ে যায় আসামিরা। এই দুইজনের আত্মীয়-স্বজনদের সাক্ষ্যে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছিল। তাদের লাশেরও সন্ধান পায়নি স্বজনেরা। ’
‘এই অভিযোগটিও প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে ট্রাইব্যুনাল এ অভিযোগে আসামিদের আমৃত্যু কারাভোগের আদেশ দিয়েছে। সব মিলিয়ে রায়ে সন্তুষ্ট। ন্যায় বিচার পেয়েছি। ’
প্রসিকিউটর হায়দার আলী বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন-সমস্ত অপরাধের শীর্ষ অপরাধ হলো গণহত্যা। আর রাজানগরে গণহত্যাসহ যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা কেবল একটি জায়গায় কয়েকজন মানুষকে হত্যা করা নয়, পুরো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। যারা এ অপরাধ করেছে তারা মানবতার শত্রু। ’
২০১৬ সালের ৩০ মে এই চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। একই বছরের ২৩ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থা। তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে আনুমানিক ১০২টি পরিবারের ১৩২টি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, ছয়জনকে ধর্ষণ, সাতজনকে অপহরণ ও ৬১ জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮
ইএস/এমজেএফ