কিন্তু রায় ঘোষণার ক’দিন আগেই তাকে বদলি করে এ আদালতের দায়িত্ব দেওয়া হয় খন্দকার হাসান মো. ফিরোজকে। তিনি এ মামলার দায়িত্ব পাওয়ায় নতুন করে ফের যুক্তিতর্ক গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়।
ওইদিন আদালতে মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি আসাদুজ্জামান খান রচি।
আবেদনের পক্ষে শুনানিতে তিনি বলেন, এ মামলায় সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। ফলে আরো অনেককে সাক্ষী করা যায়নি। সঠিকভাবে তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনসহ ওই সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা যেতো। তাদের সাক্ষ্য প্রমাণে মামলার অভিযোগ সঠিকভাবে প্রমাণ করা সম্ভব হতো।
বিচারক খন্দকার হাসান মো. ফিরোজ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করে ২২ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন।
প্রথমে এ মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল এক মাস ২৩ দিন। কিন্তু ওই সময় গত সাড়ে ৪ বছরেও শেষ হয়নি!
মামলার প্রধান আসামি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অধিকতর প্রতিবেদন দাখিল না করায় মামলার বিচার বিলম্বিত হচ্ছে।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান খান রচি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। এ মামলায় ওই সময় সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। ফলে আরো অনেককে সাক্ষী করা যায়নি। সঠিকভাবে তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনসহ ওই সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা সম্ভব হতো। পাশাপাশি ন্যায় বিচারও নিশ্চিত করা যেতো।
তিনি বলেন, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতেই মামলার অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন আছে। কেননা মঞ্জুরকে ওইদিন তার স্ত্রী ও মেয়ের সামনে থেকেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। ওই সময় কারা তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন এই বিষয়ে তার স্ত্রী ও মেয়েই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু মূল চার্জশিটে তার স্ত্রী ও মেয়েকে সাক্ষী করা হয়নি।
আসাদুজ্জামান খান রচির সহকারী আইনজীবী আদালতের এপিপি মো. আবুল কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ বেশ কিছু স্পর্শকাতর মামলায় ব্যস্ত থাকায় প্রতিবেদন দাখিলে বিলম্ব হচ্ছে মর্মে আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
রোববার (২২ জুলাই) মামলাটি অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোনো প্রতিবেদন জমা না না দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক প্রদীপ কুমার সরকার আগামী ২১ অক্টোবর প্রতিবেদন জমার জন্য নতুন দিন ধার্য করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক ও লে. কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া।
৫ আসামির মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত আছে মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল লতিফ ও লে. কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শামসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১ জুন মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে পুলিশ হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখানেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেনারেল মঞ্জুরের বড় ভাই ব্যারিস্টার আবুল মনসুর আহমেদ বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় এ হত্যা মামলা করেন।
ওই বছরের ১৫ জুলাই আদালতে চার্জশিট জমা দেন সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ। এর আগে ১ মার্চ আসামি এমদাদুল হক, ১২ মার্চ মোহাম্মদ আবদুল লতিফ ও শামসুর রহমান এবং ১৮ জুন মোস্তফা কামালকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৯৫ সালের ১১ জুন কারাগারে থাকা এরশাদকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে আসামিরা সবাই জামিনে রয়েছেন।
মঞ্জুর হত্যা মামলায় মোট ৪৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ২০১২ সালের ২ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এরশাদ। এর সমর্থনে আদালতে লিখিত বক্তব্যও জমা দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়; ১৮২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৮
এমআই/এমএ