বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন।
বক্তব্যে কামাল হোসেন বলেন, আমাদের সংবিধানের ৪৬ বছর হয়ে গেছে। সংবিধান সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নাই এই দাবিটি আমি কোনো দিন করিনি। গত ৪৬ বছর মানবাধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য এই সংবিধানেরই আশ্রয় নিতে হয়েছে।
‘আপনাদের মনে আছে ১৯৮২ সালে বিকেন্দ্রীকরণের নামে এই কোর্টকে (হাইকোর্ট) যখন ছয় টুকরা করা হয়েছিলো, তখনও আমাদের সংবিধানের সাহায্য নিতে হয়েছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য। ’
তিনি বলেন, আজ যদি মনে করা হয় যে, এই সংবিধানের সংশোধনের প্রয়োজন আছে, আরও উন্নত করার দরকার আছে এবং কী কী ভাবে সংশোধন করলে আরও উন্নত হবে, কোথায় কোথায় সংশোধনী করতে হবে, বিনা দ্বিধায় সেগুলো আপনারা তুলে ধরেন।
‘এছাড়া স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের মৌলিক অধিকার, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে সে ব্যাপারগুলোতেও যথাযথ বিধান করতে হবে। ’
ড. কামাল হোসেন বলেন, এই বারকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। আমরা সবাই একবার না একবার এই বারের সভাপতি থাকাকালে জেলে গিয়েছি। তারপরও নির্ভয়ে আমরা সংবিধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া এবং রক্ষাই হলো এই সংবিধানের লক্ষ্য এবং আদর্শ। আমি বিশ্বাস করি যে কেউ আসুক না কেন কলমের খোঁচা দিয়ে এই সংবিধানকে ধ্বংস করা যাবে না।
‘সংবিধান হলো একটি ঢাল। রাষ্ট্র ক্ষমতার অপব্যবহার যখন হয় এই ঢালটা নিয়ে মানুষ দাঁড়াতে পারে। সাময়িকভাবে যদি সে অপপ্রয়োগ মানুষের গায়ে লাগলেও সংবিধানের সাহায্য নিয়ে মানুষ তা প্রতিরোধ করে। ’
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, মাঝে নিরাশ হয়ে যাচ্ছিলাম। এর মাঝে আশার আলো দেখলাম। এতকিছু ঘটে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে না। আমার আশঙ্কাটা দূর হলো যখন কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ছাত্ররা রাস্তায় নামলো। কোটা বাতিলের দাবি কিন্তু তারা করেনি, চেয়েছে সংস্কার। এই সংস্কার শব্দটা সবাইকে বোঝা দরকার। কোনো রাষ্ট্রই এ রকম না যেখানে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন নাই। কেউ এমনটা দাবি করতে পারে না।
‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চোখ খুললো সবার! পাইকারিভাবে আইন অমান্য হচ্ছিলো, স্কুলের ছাত্ররা তা চেক করে করে তা দেখিয়ে দিলো। ওদের নিয়ে তো আমাদের গর্ব করা উচিৎ। স্কুল কলেজের ছাত্ররা যে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে! ঝুঁকি নিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে সবাইকে জাগিয়েছে। এখন তো দেখছি, লাইসেন্স চেক, ফিটনেস চেক করা শুরু হয়েছে। ’
পুরানো কারাগারে আদালত স্থাপন নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, জেলখানায় আদালত এটা স্ববিরোধী কথা। জেলখানা জেলখানাই, আদালত আদালতই। জেলখানায় আদালত কেন হলো, কীভাবে হলো, কোন আইনে হলো এই প্রশ্নগুলো আপনারা আনবেন। এটা অস্বাভাবিক।
নির্বাচনকে সামনে রেখে যে সর্বদলীয় ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়েছে সেখানে দল হিসেবে জামায়াত ইসলামী থাকছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন,‘না'। এক কথায় উত্তর ‘না’।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
ইএস/এমএ