সোমবার মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর একান্ত সচিব ড. জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে আলাদা আলাদাভাবে যুক্তি তর্ক মুলতবি রাখার আবেদন করা হয়।
আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে আদালতে না আসা পর্যন্ত যুক্তিতর্ক মুলতবি রাখার আবেদন করেন।
আরো পড়ুন>>
** দুই আসামির অনাস্থা, মুন্নার জামিন বাতিল
পরে আসামি মুন্নার পক্ষে তার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও মনিরুলের পক্ষে আইনজীবী আক্তার হোসেন আদালতে বলেন, আসামিদের কোরাম হয়নি। এমতাবস্থায় যুক্তিতর্ক শুনানি করা আইন সম্মত হবে না। তাছাড়া গত ২০ সেপ্টেম্বরের আদেশে তারা সংক্ষুব্ধ, ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য তারা যুক্তিতর্ক মুলতবি রাখার আবেদন করেন।
আসামিদের এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল।
তিনি বলেন, এ বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আদালতের বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে।
খালেদার আইনজীবীরা বাইরের নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে তাদের পরামর্শ মতো কাজ করছেন। এটি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ।
মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে ঘোলপানিতে মাছ শিকার করতে চান তারা। এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানি করার কোনো বিধান নেই। তবু আদালত যুক্তিতর্ক শুনতে চেয়েছেন। কিন্তু আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি না করলে তো মামলার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। যুক্তিতর্ক শুনানি না করলে রায় প্রচার করার জন্য তারিখ প্রার্থনা করেন তিনি।
পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর স্থাপিত পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান যুক্তিতর্ক স্থগিতের আবেদন নাকচ করলে প্রথমে ড. জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে তার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও পরে মনিরুলের পক্ষে তার আইনজীবী আক্তার হোসেন আদালতের প্রতি অনাস্থা জানান।
এ সময় দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর কাজল বলেন, আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ওই আদালতের প্রতিই জামিনের মেয়াদ বাড়ানো আবেদন করা যায় না। তিনি মুন্নার জামিন বাতিলের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে বিচারক মুন্নার অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে মনিরুল ইসলাম স্থায়ী জামিনে থাকায় তাকে জামিন বহাল রাখা হয়। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনও মঞ্জুর করা হয়।
শুনানি শেষে মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আদালত পক্ষপাতিত্ব করছেন। এ আদালতে আসামিরা ন্যায়বিচার পাবে না মর্মে যে আশঙ্কা ছিল মুন্নার জামিন বাতিলের মধ্যদিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে।
তবে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তা আইন সঙ্গতভাবেই দিয়েছেন।
এ মামলার আসামি চারজন। তারা হলেন- কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ের রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এর মধ্যে হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই সোমবার বেলা ১১টা ৮ মিনিটে আদালতে কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত আদালত চলে।
মামলার যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল গত ১২ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সেদিন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ। তার পরিবর্তে খালেদার কাস্টডি আদালতে পাঠানো হয়।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হতে ‘অনিচ্ছুক’। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বরও খালেদার ‘অনিচ্ছা’র কথা জানিয়ে একই কাস্টডি পাঠানো হয় আদালতে।
সেদিন দুদকের আইনজীবী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে কি-না, এ বিষয়ে আদেশের জন্য ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।
পরে ওইদিন আদালত বলেন, খালেদা জিয়া বিচার পর্যায়ে ৪০ বার, আত্মপক্ষ সমর্থন পর্যায়ে ৩২ বার (আদালতে উপস্থিত হতে) সময় নিয়েছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর এতদিন পর্যন্ত এ মামলার যুক্তিতর্ক করা শুরু করা সম্ভব হয়নি।
কোনো আসামি যদি দিনের পরদিন (আদালতে) না আসেন, তবে তো মামলার বিচার প্রক্রিয়া থেমে থাকতে পারে না।
তাই খালেদা জিয়াকে ছাড়াই অন্য আসামিদের পক্ষে এ মামলার যুক্তিতর্ক শুরুর জন্য আইনজীবীদের নির্দেশ দেন আদালত। পরে ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া দণ্ডিত হওয়ার পর থেকে পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন।
এরপর থেকে মামলার শুনানির দফায় দফায় তারিখ পড়লেও ‘অসুস্থ থাকায়’ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আদালতে হাজির হতে পারেননি তিনি।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। এ ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেন-দেনের অভিযোগে এ মামলা করে দুদক।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
এমআই/এমএ