এ বিষয়ে আদেশের জন্য রোববার (৭ অক্টোবর) দিন ধার্য করেছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাজী আকতার হামিদ।
গত বছরের ১ নভেম্বর মামুনের মৃত্যুদণ্ডাদেশসহ হাইকোর্টের পুরো রায় বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওই রায়ের ফলে অন্য তিন আসামি আল আমিন, আকবর আলী লালু ওরফে রনি ও রফিকুল ইসলাম খোকনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও বহাল রয়েছে।
৫ আসামির মধ্যে অন্যজন পলাতক সেলিম চৌধুরী ওরফে সেলিম আহমেদকে হাইকোর্টের মতোই সর্বোচ্চ আদালত থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
পরে মামুনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ পুর্নবিবেচনা চেয়ে আবেদন করা হয়। যার ওপর বৃহস্পতিবার শুনানি শেষ হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাইফুল বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার মধ্য খোন্তাকাটা গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের ছেলে। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আল আমিন পটুয়াখালীর হাজিখালী গ্রামের ফারুক ঘরামীর ছেলে, লালু শরিয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার গোয়ালকোয়া গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে এবং খোকন ময়মনসিংহ নগরের নাটকঘর বাইলেনের আব্দুস সালামের ছেলে। খালাসপ্রাপ্ত সেলিম ভোলার শশীভূষণ থানার উত্তর চরমঙ্গল গ্রামের সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরীর ছেলে।
এ মামলায় পাঁচ আসামিকেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। আর হাইকোর্ট তাদের মধ্যে সাইফুলের মৃত্যুদণ্ড বহাল, আল আমিন, লালু ও খোকনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সেলিমকে খালাস দেন।
২০১২ সালের ৫ মার্চ রাত ১টার দিকে রাজধানীর গুলশানে কূটনৈতিক এলাকার ১২০ নম্বর সড়কের ১৯/বি নম্বর বাসার সামনে গুলিবিদ্ধ হন খালাফ আল আলী (৪৫)। ৬ মার্চ ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ওই বছরের ৪ জুন দক্ষিণখান থানার গাওয়াইর এলাকা থেকে চার ছিনতাইকারী সাইফুল, লালু, আল আমিন ও খোকনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশের ডাকাতি, দস্যুতা ও ছিনতাই প্রতিরোধ টিম।
এসময় তাদের কাছ থেকে কালো রঙের একটি বিদেশি পয়েন্ট ২২ বোরের রিভলবার জব্দ করা হয়। অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে ওইদিনই তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।
খালাফ হত্যার আসামি সাইফুল ও আল আমিন আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্বীকার করেন যে, ৫ মার্চ দিনগত রাতে ছিনতাই করতে বাধা দেওয়ায় তারা চারজনসহ পলাতক সহযোগী সেলিম খালাফ আল আলীকে এ অস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।
তবে আল আমিন তার জবানবন্দিতে সাইফুল গুলি করেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সাইফুলসহ বাকি চারজন ওই রাতে খালাফকে ঘিরে ধরেন এবং তার কাছে ডলার চান। ডলার না দেওয়ায় তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পরে সাইফুল তার হাতে থাকা রিভলবার দিয়ে খালাফকে গুলি করে পালিয়ে যান।
পরে সাইফুল, আল আমিন, লালু ও খোকনকে খালাফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখায় (শ্যো’ন অ্যারেস্ট) পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. ওবায়দুল হক ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ওই চারজনসহ পলাতক সেলিমকে আসামি করে এ মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
একই বছরের ৩১ অক্টোবর পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে এ মামলার বিচার শুরু করেন ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় মোট ৩৩ জন সাক্ষ্য দেন।
গ্রেফতারকৃত চার আসামি ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি এবং ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।
উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর খালাফ আল আলীকে হত্যার দায়ে ৫ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের পর কারাগারে থাকা আসামিরা হাইকোর্টে জেল আপিল ও জামিনের আবেদন জানান। অন্যদিকে বিচারিক আদালত থেকে ডেথ রেফারেন্স আসে এবং কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুসারে দণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমতি চান।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট থেকে ডেথ রেফারেন্স ও সবগুলো জেল আপিলের শুনানি একসঙ্গে শুরু হয়ে ৩ নভেম্বর শেষ হয় হাইকোর্ট বেঞ্চে।
২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর আসামি সাইফুলকে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অন্য তিনজন আল আমিন, লালু ও খোকনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং পলাতক সেলিমকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১৪ সালের ২৩ জুলাই আপিলটি মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৮
ইএস/আরআর