দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ৯০ কার্যদিবসে মামলা নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও ৩২১ ধার্য তারিখেও নিষ্পত্তি হয়নি বিচার কাজ। এই সময়ে মামলার ১৭১ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে মাত্র ৪৩ জনের।
কিবরিয়ার পরিবারের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও আশার বানী শুনিয়েছেন সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মামলাটি দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
মামলা নিষ্পত্তিতে ধীরগতির কারণ হিসেবে কিবরিয়া পরিবারের আবেদনে তদন্ত বেশ কয়েকবার পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন মামলার ব্যাপারে কিবরিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা মিলছে না।
মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া মামলার সাক্ষী হলেও তিনিও সাক্ষ্য দিচ্ছেন না, অন্য সাক্ষীরাও আদালতমুখী হচ্ছেন না। তবে এরই মধ্যে ৪৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
আলোচিত এই হত্যা মামলার বাদী হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি বাংলানিউজকে বলেন, মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা প্রায় পৌনে দুইশ’। ৪৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। এছাড়া আসামিদের অনিয়মিত হাজিরার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এই মামলার বিচারকার্য বিলম্বিত হচ্ছে।
তবে সরকারের চলতি মেয়াদেই এই হত্যা মামলার সুষ্ঠু বিচার কাজ সম্পন্ন হবে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে, মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা কেন- সে প্রশ্ন এখন সিলেটের মানুষের মুখে মুখে। এ নিয়ে খোদ আইনজীবীরাও হতাশ।
সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি কিশোর কুমার কর বাংলানিউজকে বলেন, মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি। এই সময়ের মধ্যে ৩২১টি তারিখ গত হয়ে গেছে। মূলত মামলার অধিকতর তদন্ত, বিচারক না থাকা, সাক্ষী না আসা ও নির্দিষ্ট তারিখগুলোতে আসামিদের হাজির করতে না পারাটাই বিচারকার্য বিলম্ব হওয়ার কারণ।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে আওয়ামী লীগের ঈদ-পরবর্তী জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এস কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলীও এ ঘটনায় নিহত হন।
গুরুতর আহত হন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। এছাড়াও আহত হন প্রায় ৭০ জন নেতাকর্মী। এখনও তারা আঘাতের যন্ত্রণা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন।
ঘটনার পরদিন ২৮ জানুয়ারি তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দু’টি মামলা করেন। পরে মামলা দু’টি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় সিআইডি। এ অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাদী মজিদ খান। এরপর ২০০৭ সালে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য আবারও সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেরুন্নেসা পারুল সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিনের ভগ্নিপতি হাফেজ মো. ইয়াহিয়াসহ আবু বকর, দেলোয়ার হোসেন, শেখ ফরিদ, আবদুল জলিল ও মাওলানা শেখ আবদুস সালামকে অভিযুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। তাদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
সবশেষ গত ৭ জানুয়ারি মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। ওই দিনও হাজির হননি সাক্ষীরা। আগামি সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি।
এরই মধ্যে সিলেটের আদালতেই ছয় বিচারকের হাত বদল হয়েছে মামলাটি। বর্তমানে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক রেজাউল করিমের আদালতে মামলাটির বিচার কার্য চলছে।
এর আগে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ মমিনুল্লাহ, মনির আহমদ পাটোয়ারী, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামী, দিলীপ কুমার দেবনাথ, মকবুল আহসানের আদালতে গিয়েছিল মামলাটি।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৯
এনইউ/এইচএ/